বিধবাবিবাহ

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনে ভারতের বিচারব্যবস্থায় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ বৈধকরণ

বিধবাবিবাহ বলতে বোঝায় একজন মহিলার স্বামীর মৃত্যুর পর তার পুনরায় বিয়ে করার প্রথা। ঐতিহাসিকভাবে, বিধবাবিবাহ অনেক সমাজেই নিষিদ্ধ ছিল। বিধবা নারীদের প্রায়শই সামাজিকভাবে বর্জন করা হত এবং তাদের কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হত, যার মধ্যে রয়েছে শোকের পোশাক পরা, সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে, তাদের যৌন কার্যকলাপও নিষিদ্ধ করা হত। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলে সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তিনি যুক্তি দেন যে বিধবা নারীদেরও পুনরায় বিবাহের অধিকার রয়েছে এবং তাদের জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া উচিত। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে ১৮৫৬ সালে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন পাস হয় যা হিন্দু বিধবাদের পুনরায় বিবাহের আইনি অনুমতি দেয়। বিধবাবিবাহ আজও অনেক সমাজে বিতর্কিত বিষয়। কিছু লোক এটিকে নৈতিকভাবে ভুল বলে মনে করেন, অন্যরা এটিকে নারীর অধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেখেন। বিধবাবিবাহ শুধুমাত্র একজন নারীর ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, বরং এটি তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে বিধবা নারীরা সঙ্গ, সমর্থন এবং আর্থিক নিরাপত্তা পেতে পারেন। এটি তাদের সন্তানদের জন্যও একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

  • কোন বালিকা বিধবা হইয়াছে শ্রবণ করিলে, বিদ্যাসাগর হৃদয়ের আবেগ কিছুতেই সম্বরণ করিতে পারিতেন না, উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিয়া উঠিতেন। তিনি বাল্যকাল হইতেই বিধবা-বিবাহ প্রচলনের পক্ষপাতী ছিলেন।
  • বিধবাবিবাহ না থাকাতে আমাদের সমাজে স্ত্রীলােকদের অত্যন্ত কষ্ট? তােমাদের দেশে কুমারীবিবাহ বন্ধ হয়ে সমাজে যত অনাথা স্ত্রীলােকের আবির্ভাব হয়েছে আমাদের দেশে বিধবাবিবাহ বন্ধ হয়ে তত হয় নি। সমাজের মঙ্গলের প্রতি যদি লক্ষ করা যায় তবে আমাদের দেশে বিধবাবিবাহ অসম্ভব, তােমাদের দেশে অবস্থা বিশেষে বিধবাবিবাহ আবশ্যক।
  • আমাদের সমাজ যে উত্তরোত্তর জটিল সমস্যা হইয়া উঠিতেছে, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। কেহ বলিতেছে বিধবাবিবাহ ভাল, কেহ বলিতেছে মন্দ; কেহ বলিতেছে বাল্যবিবাহ উচিত, কেহ বলিতেছে অনুচিত; কেহ বলে পরিবারের একান্নবর্ত্তিতা উঠিয়া গেলে দেশের মঙ্গল, কেহ বলে অমঙ্গল। আসল কথা, ভাল কি মন্দ কোনটাই বলা যায় না– কোথাও বা ভাল কোথাও বা মন্দ।
  • বিধবাবিবাহ প্রচলিত হইলে, ব্যভিচার দোষের ও ভ্রুনহত্যা পাপের নিবারণ হইবেক, এ কথার অর্থ কি। ব্যভিচার যদি দোষ বলিয়া গণ্য হইত, তাহা হইলে, এই পবিত্র দেশের অতিপবিত্র সাধুসমাজে, কদাচ এরূপ প্রবল ভাবে প্রচলিত থাকিত না।
  • ঋগ্বেদের সময় সহমরণ ছিল না। যিনি বিধবা হইতেন, তিনি স্বামীর মৃতদেহের সহিত কিয়ৎকালের জন্য স্থাপিত হইয়া উঠিয়া আসিতেন। পরে তিনি অন্য পুরুষকে বিবাহ করিতে পারিতেন। ঋষিরা বিধবা বিবাহ করিতেন।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা