ইলিয়াস কাঞ্চন

বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিনেতা
(ব্যবহারকারী:Imamanik05/ইলিয়াস কাঞ্চন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ইদ্রিস আলী (জন্ম: ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৬) (যিনি ইলিয়াস কাঞ্চন নামে জনপ্রিয়) একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিনেতা এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৭৭ সালে বসুন্ধরা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের নব্বইয়ের দশকের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। কাঞ্চন ৩০০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত বেদের মেয়ে জোছনা (১৯৮৯) ছবিটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।

সব সময় চেয়েছি ভাল কাজ করব। মানুষের জন্য করব। নিজের কথাটা শুধু না ভেবে সবার কথা ভেবেছি।

তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর পর তিনি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন গড়ে তুলেন। সমাজসেবায় তার এই অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া ২০২১ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।

  • এই সংগঠন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সারাজীবন এই কাজটি করে যেতে চাই। মানুষের কল্যাণ বড় বিষয়। আমি সবসময় মানুষের কথা বিবেচনা করি। দেশের কথা ও দেশের মানুষের কথা ভাবি। সেভাবেই কাজ করে যাব।
  • জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা সড়কের দুর্যোগ ‘সড়ক দুর্ঘটনা বা রোড ক্র্যাশ’ আমাদের জাতীয় জীবনে বড় ধরনের একটা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তৃণমূল থেকে উচ্চপর্যায় এ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হলেও কোথায় যেন একটা গলদ থেকে যাচ্ছে। অদৃশ্য একটা বলয় সব ইচ্ছার অপমৃত্যু ঘটাচ্ছে। এ কারণে সড়কের ভয়াবহতার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ২৯ বছর আগে যে আবেগ ও শোকাবহ শক্তিকে অদমিত ইচ্ছায় পরিণত করে সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ স্লোগানে সোচ্চার হয়েছিলাম, সেই আহ্বান, সেই চাওয়া আজ পুরো জাতির।
    • ২২ অক্টোবর ২০২২-এ প্রকাশিত নিবন্ধে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
  • শিল্পীরা কেন দুঃস্থ হবেন? শিল্পীরা থাকবেন সম্মানের জায়গায়। শিল্পীরা কাজ করবেন। শিল্পীদের জন্য চাল ডাল বিতরণের দৃশ্য লাইভ করে সবাইকে দেখানোটা দুঃখজনক। এজন্য সিনেমা নির্মাণ যদি বাড়ে তাহলে কিন্তু শিল্পীদের সাহায্যের আশায় থাকতে হবে না। তারা কাজ করতে পারবেন। সাহায্য নিয়ে চললে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে না।
    • শিল্পীদের কেন দুঃস্থ শিল্পী বলা হয়, ১৪ জানুয়ারী ২০২২-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা
  • ছোটবেলায় সিনেমা দেখতাম সেই সময় মনে হতো আমি যদি অভিনয় করতে পারতাম? মায়ের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখতাম। আর ভাবতাম এইসব। তারপর নিয়তি আমাকে এখানে নিয়ে আসেন। অনেক সিনেমা করেছি। অনেক পেয়েছি এখান থেকে। বহু আগে থেকে আমার ভেতরে কাজ করে সমাজের ও দেশের জন্য কিছু করব। তারপর তো করেই চলেছি। সব সময় চেয়েছি ভাল কাজ করব। মানুষের জন্য করব। নিজের কথাটা শুধু না ভেবে সবার কথা ভেবেছি।
    • নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ভাবনা সম্পর্কে, ১৪ জানুয়ারী ২০২২-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা
  • পরিবহন খাত ঘিরে মাফিয়া চক্র সক্রিয় আছে। এরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এরাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। সাধারণ শ্রমিক বা মালিকদের তো সেই সুযোগ নেই।
    • পরিবহন খাত সম্পর্কে, ১২ অক্টোবর ২০২২-এ আপডেটকৃত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
  • (সড়ক আইন) ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে সাধারণ শ্রমিক ও এমনকি মালিকদের স্বার্থে নয়। একশ্রেণির শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতা এটি ঠেকিয়ে রেখে লাভবান হতে চাইছেন। আইন কার্যকর হলে তো তাঁরা চাঁদাবাজি করতে পারবেন না। অনেক পরিবহনশ্রমিকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা অনেক কষ্টে আছেন। নেতারা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে যে চাঁদা নেন, তা তো শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমার সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন, একজন পরিবহনশ্রমিক মারা গেলেন, তাঁর পরিবারকে কোনো সহায়তা দেওয়া হলো না। আমরা কিছুটা সহযোগিতা করেছি। পরিবহনশ্রমিকদের কল্যাণের জন্য তাঁরা চাঁদা নিয়েছেন, অথচ শ্রমিকদের জন্য একটি হাসপাতাল করেননি, তাঁদের সন্তানদের স্কুল বা কলেজে পড়াশোনায় সহায়তা করেননি। আসলে সাধারণ শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে নেতারা আখের গুছিয়েছেন।
    • সড়ক আইন সম্পর্কে, ১২ অক্টোবর ২০২২-এ আপডেটকৃত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
  • প্রধানমন্ত্রী তো নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি তো বাস্তবায়ন করবেন না। বাস্তবায়ন না করায় কারও তো কোনো অসুবিধা হয়নি। তাহলে বাস্তবায়ন করবে কেন? বাস্তবায়ন না করার কারণে যদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি অসুবিধায় পড়তেন, তাহলে অবশ্যই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হতো।
    • নিরাপদ সড়ক সম্পর্কে, ১২ অক্টোবর ২০২২-এ আপডেটকৃত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
  • সচেতনতাও একটি সংস্কৃতি। এটি আমাদের এখানে গড়ে ওঠেনি। স্বাধীনতার পর এমন একটি সরকারও আসেনি, যারা মানুষকে নিয়মের মধ্যে আনতে, আইনের মধ্যে আনতে যথেষ্ট কাজ করেছে। অনিয়মকে আমরা নিয়মে পরিণত করে ফেলেছি। কেবল উপদেশ দিয়ে মানুষকে সচেতন করা যাবে না। সচেতন করতে হলে সিঙ্গাপুরের মতো আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। একসময় সিঙ্গাপুরেও চরম বিশৃঙ্খলা ছিল। তারা সেটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে।
    • সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মানুষের সচেনতা সম্পর্কে, ১২ অক্টোবর ২০২২-এ আপডেটকৃত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
  • সাধারণ শ্রমিকেরা কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন না। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, যারা সড়ক আইন চায় না। পরিবহনশ্রমিক ও মালিকেরা যে আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, সেই আইনটি তো আমি করিনি। করেছে জাতীয় সংসদ। প্রধানমন্ত্রী নিজে আইনটি বাস্তবায়নের পক্ষে সংসদে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।
    • সড়ক আইন সম্পর্কে, ২৪ নভেম্বর ২০১৯-এ আপডেটকৃত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো

তার সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • কাঞ্চন ভাই অনেক চমৎকার মানুষ। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে আমার একজন অভিভাবক। আমার খারাপ দিনগুলোতে তিনি নানাভাবে সাহস দিয়েছেন। এখনো তার পরামর্শ নেই আমি।
  • কাঞ্চন ভাই সুন্দর মানুষ, রোমান্টিক নায়ক। তার সঙ্গে কিছু কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছে। প্রচন্ড রাশভারী মানুষ বলে মিশতে ভয় পেতাম। যখন উনার সঙ্গে ‘বদসুরত’ সিনেমার কাজ করছিলাম মনে হয়েছিলাম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবো। কিন্তু সেটি পাইনি। তবে তার সঙ্গে অভিনয়টা দারুণ উপভোগ করেছিলাম। শুধু ভাবতাম কাঞ্চন ভাই এমন কেন? পর্দায় তিনি কত রোমান্টিক, অথচ বাইরে কড়া মাস্টারের মতো। শট দেয়া শেষ হলেই বদলে যান। সিরিয়াস হয়ে থাকেন। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন অনেক আগে থেকেই। শুটিং স্পটে ব্যস্ততা না থাকলে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। কখনো কারো সঙ্গে কথা দিয়ে কথা না রাখার অভিযোগ শুনিনি। অহংকার ছিলো না কোনোদিন।
  • নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেব। তাঁর দাবি সবারই দাবি। তাঁর এই কাজ দেশব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। তাঁর সঙ্গে দেশের মানুষ রয়েছে।
  • ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত ‘সহযাত্রী’ সিনেমাটি আমি প্রথম দেখি। সেই সিনেমা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। তার মতো নায়ক বা সুপারস্টার হবার দুঃসাহস নেই। তবে তার আদর্শ আমি লালন করি। ইলিয়াস কাঞ্চনের যতো গল্প শুনেছি সব মনে জমিয়ে রেখেছি। সেগুলো থেকে শিক্ষা নেই। আমাদের প্রজন্মের উচিত, এই কিংবদন্তির মূল্যায়ণ করা। তার জীবন ও কর্ম অনুসরণ করা।
  • কাঞ্চন ভাই আমার অভিভাবক, এই ইন্ডাস্ট্রির অনেকের অভিভাবক। লোকের ধারণা চলচ্চিত্রের মানুষেরা ধর্ম কর্ম করে না। কাঞ্চন ভাইকে তাদের দেখা উচিত। শুটিং স্পটেও তিনি ধর্মের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ থেকে বিন্দুমাত্র দূরে থাকেন না। অনেকেই বলে ইলিয়াসি কাঞ্চন কিপটে লোক। আমি বলি তিনি মিতব্যায়ী। কিপটে বা খঞ্জুস হলো তারা যারা প্রয়োজনেও খরচ করে না। কাঞ্চন ভাই তেমন নন। তিনি অভিনয় জগতে আমার আদর্শ। আমি বলবো, এই প্রজন্মের অভিনেতাদের উচিত এই জীবন্ত কিংবদন্তির জীবন অনুসরণ করা। কাঞ্চন ভাই, আরও অনেক অনেক দিন আপনি বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে।
  • ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদের কাছে একজন সম্মানিত শিল্পী। দেশের মানুষের নিরাপদের কথা মাথায় নিয়ে ২৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের কল্যাণেই নিবেদিতপ্রাণ। তাঁকে অপমান করা মানে পুরো শিল্পীসমাজকে অপমান করা। আমরা তাঁর অপমান সহ্য করব না।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা