ব্যাঙ
ব্যাঙ উভচর (অ্যাম্ফিবিয়ান) শ্রেণীর অ্যানিউরা (লেজহীন, অ্যান=নাই, ইউরো=লেজ) বর্গের মেরুদণ্ডী প্রাণী। এদের লাফ (দেহের আয়তনের তুলনায় বিশ্বরেকর্ড) ও বর্ষাকালে (প্রজনন ঋতু) ঘ্যাঙর্ ঘ্যাঙ্ ডাক (প্রণয় সম্ভাষণ) বিখ্যাত।
উক্তি
সম্পাদনা- রাজবাড়িতে যাবার যে পথ, সেই পথের ধারে প্রকাণ্ড দেয়াল, সেই দেয়ালের পাশে ব্যাঙেদের পুকুর। সোনাব্যাঙ, কোলাব্যাঙ, গেছোব্যাঙ, মেঠোব্যাঙ—সকলেরই বাড়ি সেই পুকুরের ধারে। ব্যাঙেদের সর্দার যে বুড়ো ব্যাঙ, সে থাকে দেয়ালের ধারে, একটা মরা গাছের ফাটলের মধ্যে, আর ভোর হলে সবাইকে ডাক দিয়ে জাগায়—“আয় আয় আয়—গ্যাঁক্ গ্যাঁক্ গ্যাঁক্—দেখ দেখ দেখ—ব্যাঙ ব্যাঙ ব্যাঙ—ব্যাঙাচি।” এই বলে সে অহংকারে গাল ফুলিয়ে জলের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে, আর ব্যাঙগুলো সব “যাই যাই যাই—থাক থাক থাক” ব’লে, ঘুম ভেঙে মুখ ধুয়ে দাঁত মেজে, পুকুরপারের সভায় বসে।
- সুকুমার রায়, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী (প্রথম খণ্ড), নানা গল্প, ব্যাঙের রাজা, পৃষ্ঠা ১৭৯
- রাজার মেয়ে চারদিকে আর কাউকে দেখ্তে পেল না, খালি দেখ্ল, একটা মস্ত ব্যাঙ্ জলের ভিতর থেকে মাথা বার ক’রে ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে চেয়ে আছে!
- সুখলতা রাও, ব্যাঙ্ রাজা, গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, কলকাতা, মুদ্রক- ব্রাহ্মমিশন প্রেস, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১
- গ্রামের ধারে কবেকার পুরানো এক পাতকুয়োর ফাটলের মধ্যে কোলাব্যাঙ তার পরিবার নিয়ে থাকত! গ্রামের মেয়েরা সেখানে জল তুলতে এসে যে-সব কথাবার্তা বলত কোলাব্যাঙ তার ছেলেদের সেই-সব কথা বুঝিয়ে দিত-আর ছেলেরা ভাবত, ‘ইস্! বাবা কত জানে!'
- সুকুমার রায়, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড), অন্যান্য গল্প, ব্যাঙের সমুদ্র দেখা, পৃষ্ঠা ৩৭০
- তাদের আড্ডা ছিল, গ্রাম ছাড়িয়ে, মাঠ ছাড়িয়ে, বনের ধারে, ব্যাঙ-ছাতার ছায়ার তলায়। ছেলেবেলায় যখন তাদের দাঁত ওঠে নি, তখন থেকে তারা দেখে আসছে, সেই আদ্যিকালের ব্যাঙের ছাতা। সে যে কোথাকার কোন্ ব্যাঙের ছাতা, সে খবর কেউ জানে না, কিন্তু সবাই বলে, “ব্যাঙের ছাতা”।
- সুকুমার রায়, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী (প্রথম খণ্ড), নানা গল্প, ছাতার মালিক, পৃষ্ঠা ১৭৭
• | তাতির বাড়ী ব্যাঙের বাসা— |
যোগীন্দ্রনাথ সরকার, খুকুমণির ছড়া ,পৃষ্ঠা ৪৩ |
- “কি করি, কোন দিকে যাই, কাহাকে জিজ্ঞাসা করি” কঙ্কাবতী এইরূপ চিন্তা করিতেছেন, এমন সময় সম্মুখে একটি ব্যাঙ দেখিতে পাইলেন। ব্যাঙের অপূর্ব্ব মূর্ত্তি। সেই অপূর্ব্ব মূর্ত্তি দেখিয়া কঙ্কাবতী বিস্মিত হইলেন। ব্যাঙের মাথায় হ্যাট, গায়ে কোট, কোমরে পেণ্টুলেন, ব্যাঙ সাহেবের পোষাক পরিয়াছেন। ব্যাঙকে আর চেনা যায় না। রংটি কেবল ব্যাঙের মত আছে, সাবাং মাখিয়াও রংটি সাহেবের মত হয় নাই। আর পায়ে জুতা এখনও কেনা হয় নাই। ইহার পর তখন কিনিয়া পরিবেন। আপাততঃ সাহেবের সাজ সাজিয়া দুই পকেটে হাত রাখিয়া, সদৰ্পে ব্যাঙ চলিয়া যাইতেছেন।
- কঙ্কাবতী,দ্বিতীয় ভাগ,দ্বাদশ পরিচ্ছে্দ,ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ,পৃষ্ঠা ৯৯
• | গাছের গোড়ায় গর্ত করে ব্যাঙ বেঁধেছেন বাসা, |
সুকুমার রায়, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী (প্রথম খণ্ড),বিবিধ কবিতা,বড়াই ,পৃষ্ঠা ১৫৩ |
- সাহেবের যে চাপরাসী, সে লোকটি ভারি সেয়ানা-সে বললে, “হুজুর, আমি সাপ তাড়াবার ফন্দি জানি। আমায় চার-আনা পয়সা দিন, আমি এখনি তার সরঞ্জাম কিনে আনছি।” পরের দিন চাপরাসী সেই চার-অনার সরঞ্জাম নিয়ে হাজির-একটা বঁড়শি আর ছিপ আর একটা ঠোঙার মধ্যে জ্যান্ত ব্যাঙ। দেখে সবাই হাসতে লাগল আর চাপরাসীকে ঠাট্টা। করতে লাগল। সাহেব বললেন, “বেয়াকুফ। তোকে সাপ মারতে বললাম, আর তুই মাছ ধরবার সরঞ্জাম এনে হাজির করলি?” চাপরাসী সে-সব কথায় কান না দিয়ে ব্যাঙটাকে বঁড়শিতে গেঁথে আস্তাবলের দিকে চলল। তামাশা দেখবার জন্য সবাই তার পিছন পিছন চলল। তার পর সেই ছিপে-গাথা ব্যাঙটাকে গর্তের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে চাপরাসী শক্ত করে ছিপের গোড়ায় ধরে বসে রইল। খানিক পরে ছিপে টান পড়তেই অমনি সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠল। আর চাপরাসী সেই আধ-গেলা ব্যাঙসুদ্ধ একটা প্রকাণ্ড সাপকে গর্তের মধ্যে থেকে হিড়হিড় করে টেনে বার করল। সাপেরা যখন খায় তখন ক্রমাগত গিলতেই থাকে, যা একবার গলায় ঢোকে তাকে আর ঠেলে বার করতে পারে না। কাজেই ছিপের আগায় বঁড়শি, বঁড়শিতে গাঁথা ব্যাঙ আর ব্যাঙের সঙ্গে সাপ। এমনি করে গোখুরোমশাই চার-আনার সরঞ্জামে ধরা পড়লেন। তার পর লাঠিপেটা করে তাকে সাবাড় করতে কতক্ষণ?
- সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড),জীবজন্তর কথা,গোখুরো শিকার ,সুকুমার রায় ,পৃষ্ঠা ৩২১
• | ভােতন-মােহন স্বপ্ন দেখেন— |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রবিচিত্র,ভোতন-মোহন,পৃষ্ঠা ৫১ |
- অনুসন্ধান করিতে করিতে অবশেষে কানাপিঁপড়ের সহিত নাকেশ্বরীর সাক্ষাৎ হইল! কানাপিঁপড়েকে নাকেশ্বৱী খুদে-পিঁপড়ের কথা জিজ্ঞাসা করিল। কানা-পিঁপড়ে বলিল— “আমি খুদে-পিঁপড়েদের কথা জানি। তালতলায় কচুপাত হইতে মানুষের সুমিষ্ট পরমায়াটুকু চাটিয়া-চুটিয়া খাইয়া, হাত-মুখ পুঁছিয়া, খুদে-পিঁপড়েরা গৃহে গমন করিতেছিল। এমন সময় সাহেবের পোষাক-পরা একটি ব্যাঙ আসিয়া তাহাদিগকে কুপ-কুপ করিয়া খাইয়া ফেলিল।
- কঙ্কাবতী,দ্বিতীয় ভাগ,ষোড়শ পরিচ্ছেদ,ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ,পৃষ্ঠা ১২০
- স্নানের পর শীতল হইয়া রাজা তীরে আসিলেন, কিন্তু হায়রে হায়! রানী সেই জলে ডুবিলেন, আর ভাসিলেন না। রাজার মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল, রাজ্যময় হুলুস্থুল পড়িয়া গেল। জেলেরা আসিয়া জাল দিয়া পুকুর ছাঁকিল, কিন্তু কিছুই পাইল না। পুকুরের জল সেঁচিয়া ফেলা হইল, কিন্তু তাহাতে কিছুই ফল হইল না, খালি দেখা গেল, এক গর্তের মুখে একটি ব্যাঙ বসিয়া আছে।
- উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র,মহাভারতের কথা,পরীক্ষিৎ ও সুশোভনার কথা,উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ,পৃষ্ঠা ৫৭৫
• | গলায় বাঁধা রাঙা ফিতের দড়ি, |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছড়ার ছবি,কাঠের সিঙ্গি ,পৃষ্ঠা ১২ |
• | থোকা যাবে রথে চ'ড়ে |
যোগীন্দ্রনাথ সরকার খুকুমণির ছড়া,পৃষ্ঠা ৫৩ |
- স্বাসের মধ্যে থেকে ব্যাঙ আওয়াজ দিলে, “কর্তা, ঘরে আছেন? কর্তা।” সোনালি “ও মাগো ব্যাঙ।” বলে একলাফে একটা গাছের কোটরে গিয়ে লুকোল। ছ’-ছ’টা কোলাব্যাঙ এসে উপস্থিত। তার মধ্যে সব চেয়ে বড়ো ব্যাঙ এসে হাত নেড়ে কুঁকড়োকে বললে, “বনে চিন্তাশীল যাঁরা, তাঁদের হয়ে আমরা এসেছি ধন্যবাদ জানাতে গানের ওস্তাদ আপনাকে... ওর নাম কী, অনেক গানের আবিষ্কর্তাকে”, আর একজন থপ করে বললে, “জলের মতো সহজ গানের”, অমনি তৃতীয় ব্যাঙ থপ্ থপ্ করে বললে, “যত-সব ছোটো গানের”, অমনি অন্যে বললে, “মজার গানের।”
- আলোর ফুলকি,অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,পৃষ্ঠা ৮০