ভাষা
অর্থবাহী বাকসংকেত যা মনের ভাব প্রকাশ করে ও একই সমাজের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে
ভাষার একটি কার্যনির্বাহী সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় যে ভাষা মানুষের মস্তিষ্কজাত একটি মানসিক ক্ষমতা যা অর্থবাহী বাকসংকেতে রূপায়িত (বাগযন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বনিভিত্তিক রূপে বা রূপে) হয়ে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করতে এবং একই সমাজের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কণ্ঠধ্বনি এবং হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। কণ্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারে না। আর কণ্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে সমর্থ হয়।
উক্তি
সম্পাদনা- মনুষ্যেরা মুখ দ্বারা শব্দ উচ্চারণ করিয়া মনের ভাব ও অভিপ্রায় প্রকাশ করে। ঐ সকল শব্দের উচ্চারণ বিষয়ে জিহ্বাই প্রধাম সাধন। এরূপ শব্দ উচ্চারণ করাকেই কথা কহা বলে; এবং সেই উচ্চারিত শব্দের নাম ভাষা। যে শক্তি দ্বারা ঐরূপ শব্দ উচ্চারণ করতে পারা যায় তাহাকে বাকশক্তি কহে।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - বোধোদয়, বাক্যকথন ভাষা (১৮৫২)।
- পূর্ব্ব কালে ভারতবর্ষে যে ভাষা প্রচলিত ছিল তাহার নাম সংস্কৃত। সংস্কৃত পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ভাষা অপেক্ষা প্রাচীন ও উৎকৃষ্ট। এই ভাষা এখন আর চলিত ভাষা নয়। কিন্তু ইহাতে অনেক ভাল ভাল গ্রন্থ আছে। এক্ষণে ভারতবর্ষে যত ভাষা চলিত, সংস্কৃত প্রায় সকলেরই মূল স্বরূপ। সংস্কত ভাল না জানিলে এদেশের কোন ভাষাতেই উত্তম ব্যুৎপত্তি জন্মে না।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - বোধোদয়, বাক্যকথন ভাষা (১৮৫২)।
- হৃদয়, কেন গো মোরে ছলিছ সতত,
আপনার ভাষা তুমি শিখাও আমায়!
প্রত্যহ আকুল কণ্ঠে গাহিতেছি কত,
ভগ্ন বাঁশরীতে শ্বাস করে হায় হায়!- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - কড়ি ও কোমল, হৃদয়ের ভাষা।
- ‘ভাষা’ শব্দটি আমরা নানা অর্থে প্রয়ােগ করি। জাতিবিশেষের কথা ও লেখার সামান্য লক্ষণসমূহের নাম ভাষা, যথা-বাংলা ভাষা। আবার, শব্দাবলীর প্রকার —অর্থাৎ কোন্ শব্দ বা শব্দের কোন্ রূপ প্রয়ােজ্য বা বর্জনীয় তার রীতিও ভাষা, যথা—সাধুভাষা। আবার, প্রকার এক হ'লেও ভঙ্গীর ভেদও ভাষা, যথা—আলালী, বিদ্যাসাগরী বা বঙ্কিমী ভাষা।
- রাজশেখর বসু - লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী, সাধু ও চলিত ভাষা (১৯৩৯)।
- লৈখিক ও মৌখিক ভাষার ভঙ্গীগত ভেদ অনিবার্য, কারণ, লেখবার সময় লােকে যতটা সাবধান হয় কথাবার্তায় ততটা হতে পারে না। কিন্তু দুই ভাষার প্রকারগত ভেদ অস্বাভাবিক। কোনও এক অঞ্চলের মৌখিকভাষার প্রকার আশ্রয় করেই লৈখিকভাষা গড়তে হবে।
- রাজশেখর বসু - লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী, সাধু ও চলিত ভাষা (১৯৩৯)।
- প্রতিটি ভাষাই মানুষের আত্মার চিহ্ন এবং শক্তি যা স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে। এর ফলেই প্রত্যেকে তার নিজস্ব বিচিত্র চেতনা, চিন্তা-চেতনা, জীবনের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার বিকাশ ঘটায়। যে জাতি, সম্প্রদায় বা মানুষ তার ভাষা হারিয়ে ফেলে, সে তার পুরো বা বাস্তব জীবন যাপন করতে পারে না।
- ভারতবর্ষের কতকগুলি বিশেষ ভাষাকে ভাষাবিজ্ঞানী গৌড়ীয় ভাষা নাম দিয়ে তাদের মেলবন্ধন করেছেন। আমি বাঙালি, মারাঠি ভাষা শুনলে তার অর্থ বুঝতে পারি নে; কিন্তু দুটো ভাষাই যে এক জাতের, ভাষাবিজ্ঞানীরা সেটা ধরতে পেরেছেন তাদের কাঠামো থেকে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - বাংলাভাষা-পরিচয় (১৯৪৯)।
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় ভাষা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে ভাষা শব্দটি খুঁজুন।