মুখোশ
মুখোশ হলো একটি বাহ্যিক আবরণ যা সাধারণত মুখের উপর পরা হয়। সুরক্ষা, ছদ্মবেশ বিনোদন এপ্রভৃতি বিভিন্ন প্রয়োজনে এটি পরিধান করা হয়ে থাকে। প্রাচীন কাল থেকেই আনুষ্ঠানিক এবং ব্যবহারিক উভয় কাজেই মুখোশ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুখোশের ব্যবহার দেখা যায়। নানা পদার্থ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের মুখোশ দেখা যায়।
উক্তি
সম্পাদনা- কিন্তু মোদের নজরেতে পড়লে ঠিকই ধরা,
আসল বুড়ো নয়কো তুমি, বুড়োর মুখোশ-পরা।
ছদ্মবেশে যতই আঁটো বুড়োর মুখোশখানা,
তুমি শিশু, চির-কিশোর, মোদের সেটি জানা।
সবাই মিলে আমরা জানি, পাড়ার হারু, বিশু,
রবি ঠাকুর বুড়ো ত নয়, মোদের মতই শিশু।- সুনির্মল বসু, শিশু-রবির প্রতি বাঙালী শিশু-মহল, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৪
- মুখোশ ব্যবহারের মৃখ্য কারণ আত্ম পরিচয়কে গোপন রাখা।
- বরুণকুমার চক্রবর্তী, মুখোশের ব্যবহারিক দিক ও নির্মাণ শৈলী, লোক-সংস্কৃতি ঃ নানা প্রসঙ্গ- বরুণকুমার চক্রবর্তী, প্রকাশক- বুক ট্রাস্ট, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৩৮৭ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১২৩
- দোকানর মধ্যে ফুটবল পোস্টকার্ড নানা পুতুল লজঞ্চুস মার্বেল এমনি সব সাজানো, দরজার উপরটায় একটা বিভীষণের মুখোশ হাঁ করে চোখ পাকিয়ে চেয়ে রয়েছে! রিদয় মুখোশটার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে এমন সময় এক বাবু দোকানে ঢুকেই বলে উঠলেন—“ওহে মার্কণ্ড, ছোট-খাটো দুটো পুতুল দাও দেখি, টুনু আর সুরূপার জন্যে!”
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, টুং-সোন্নাটা-ঘুম, বুড়ো আংলা- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- সিগনেট প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮২-৮৩
- বিদেশী ভাষাই প্রকাশ চর্চার প্রধান অবলম্বন হলে সেটাতে যেন মুখোশের ভিতর দিয়ে ভাবপ্রকাশের অভ্যাস দাঁড়ায়। মুখোশ-পরা অভিনয় দেখেছি; তাতে ছাঁচে-গড়া ভাবকে অবিচল করে দেখানো যায় একটা বাঁধা সীমানার মধ্যে, তার বাইরে স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। বিদেশী ভাষার আবরণের আড়ালে প্রকাশের চর্চা সেই জাতের। একদা মধুসূদনের মতো ইংরেজি-বিদ্যায় অসামান্য পণ্ডিত এবং বঙ্কিমচন্দ্রের মতো বিজাতীয় বিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র এই মুখোশের ভিতর দিয়ে ভাব বাৎলাতে চেষ্টা করেছিলেন; শেষকালে হতাশ হয়ে সেটা টেনে ফেলে দিতে হল।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিক্ষার স্বাঙ্গীকরণ, শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০৮-৩০৯
- নানা উপলক্ষ্যে যেমন মুখোশের ব্যবহার, মুখোশের যেমন দেশেভেদে নানা বৈচিত্র্য, তেমনি মুখোশ নির্মাণের উপকরণের ক্ষেত্রেও নানা বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। সাধারণভাবে এমন সব উপাদান মুখোশ নির্মণে ব্যবহাত হয় যেগুলি সুলভ এবং ওজনেও হাল্কা। মুখোশ নির্মিত হয় ব্যবহারিক কারণে। তাই মুখোশ যদি খুব ভারী হয়, তবে এর ব্যবহারকারীর পক্ষে খুব অসুবিধাজনক হয়ে দাঁড়ায় তা। মুখোশ ব্যবহারকারীর সুবিধার্থেই মুখোশকে হাল্কা করা হয়।
- বরুণকুমার চক্রবর্তী, মুখোশের ব্যবহারিক দিক ও নির্মাণ শৈলী, লোক-সংস্কৃতি ঃ নানা প্রসঙ্গ- বরুণকুমার চক্রবর্তী, প্রকাশক- বুক ট্রাস্ট, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৩৮৭ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১২৪-১২৫
- ভাঙা মানচিত্র জুড়ে শুরু হলো
তাথৈ তাথৈ আরো একবার
রঙিন মুখোশ পরে রণ-পা বাগিয়ে
তেড়ে আসছে সার্কাসের ক্লাউনেরা
অনেক হয়েছে ট্রাপিজ মহড়া এবার নাহয়
অন্য খেলা হোক- তপোধীর ভট্টাচার্য, কবিতাসংগ্রহ- তপোধীর ভট্টাচার্য, তৃতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- এবং মুশায়েরা, কলকাতা, প্রকাশসাল-২০১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৪২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৪
- ডুবুরীর মাথায় একটা লোহার মুখোশ-তাতে পুরু কাচের জানালা বসানো, তাই দিয়ে সে দেখতে পায়—আর টুপির আগায় একটা নল তা দিয়ে উপর থেকে বাতাস আসে, তবে সে নিশ্বাস ফেলতে পারে। পোশাকটি এমন যে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কোনোখান দিয়ে এক ফোঁটাও জল ঢুকতে পারে না।
- সুকুমার রায়, ডুবুরী, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬২
- যতবার ভয়ের মুখোশ তার করেছি বিশ্বাস
ততবার হয়েছে অনর্থ পরাজয়।
এই হার-জিত-খেলা—জীবনের মিথ্যা এ কুহক—
শিশুকাল হতে বিজড়িত পদে পদে এই বিভীষিকা—- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেষ লেখা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯
- পাণ্ডালের ভিতর থেকে দেবীমূর্তি বার করা হয়েছে। লাউড স্পীকারটা মাটিতে নামানো হয়েছে, কিন্তু বিজলীর তার খোলা হয় নি, এখনও একটানা রেকর্ড-সংগীত উদ্গিরণ করছে। সামনে একটা লরি দাঁড়িয়ে আছে। গুটিকতক ছেলে-মেয়ে মুখোশ পরে তৈরী হয়ে আছে, তারা চলন্ত লরির উপর দেবীমূর্তির সামনে নাচবে।
- রাজশেখর বসু, দুই সিংহ, আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প-রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০-৬১
- আরও একবার লিখে যাই মুখোশ-পুরাণ
প্রচ্ছদের শোভন আড়াল
যতই বজায় রাখো, ঝলসে ওঠে বাঘনখ
এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়
সমস্ত বিন্যাস আর ক্রমশ অবশ
হয়ে যায় যা কিছু সম্বল ছিল
ভব্যতার সামাজিক পরিসর জুড়ে তবু লিখি
আরও একবার মুখোশ-পুরাণ- তপোধীর ভট্টাচার্য, কবিতাসংগ্রহ- তপোধীর ভট্টাচার্য, তৃতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- এবং মুশায়েরা, কলকাতা, প্রকাশসাল-২০১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৪২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬১
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় মুখোশ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে মুখোশ শব্দটি খুঁজুন।