সাপ
হাত-পাবিহীন দীর্ঘ, মাংসাশী, ধূর্ত এক প্রকার সরীসৃপ
সাপ হলো সরীসৃপ গোত্রের উপাঙ্গবিহীন একটি প্রাণী। পৃথিবীতে প্রায় ২৯০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। সাপ বিষধর হিসেবে বিখ্যাত হলেও বেশীরভাগ প্রজাতির সাপ বিষহীন হয়। সাপ বছরে কয়েকবার খোলস বদলায়। সাপের জিভের আগা দ্বিধাবিভক্ত। সাপকে আঘাত করা না হলে বা কোনো কারণে উত্তেজিত করা না হলে তারা মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে। কিছু সাপের বিষে মানুষের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
উক্তি
সম্পাদনা- সে টর্চ্চের আলোতে সাপটা পরীক্ষা করলে। পুরো পাঁচ হাত লম্বা সাপটা, মোটাও বেশ। এ ধরণের সাপ মরুভূমির বালির মধ্যে শরীর লুকিয়ে শুধু মুণ্ডটা ওপরে তুলে থাকে- অতি মারাত্মক রকমের বিষাক্ত সর্প।
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বাদশ পরিচ্ছেদ, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৭
- চাপরাসী সেই আধ-গেলা ব্যাঙসুদ্ধ একটা প্রকাণ্ড সাপকে গর্তের মধ্যে থেকে হিড়হিড় করে টেনে বার করল। সাপেরা যখন খায় তখন ক্রমাগত গিলতেই থাকে, যা একবার গলায় ঢোকে তাকে আর ঠেলে বার করতে পারে না। কাজেই ছিপের আগায় বঁড়শি, বঁড়শিতে গাঁথা ব্যাঙ আর ব্যাঙের সঙ্গে সাপ। এমনি করে গোখুরোমশাই চার-আনার সরঞ্জামে ধরা পড়লেন। তার পর লাঠিপেটা করে তাকে সাবাড় করতে কতক্ষণ?
- সুকুমার রায়, গোখুরো শিকার, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩২১-৩২২
- সাপ খেলানোয় নতুনত্ব কিছু নেই, সেই গেরুয়া আলখাল্লা পরা সাপুড়ে, সেই ঝাঁপি, সেই একটানা সুরের বাঁশী। তবু সাপ খেলানো কখনো পুরানো হয় না, কখনো একঘেয়ে লাগে না। কেবল ঝাঁপির মুখ বন্ধ করে সাপুড়ে যখন বাঁশী বাজাতে বাজাতে চলে যায় তখন মনে হয় জীবনের বড় একটা উত্তেজক ঘটনা যেন শেষ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ মনটা অধীর হয়ে থাকে, ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নবম পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮০-৮১
- ১৮৭৫ সালে পলিন (Pauline) নামক একখানি জাহাজ ভারত সাগর দিয়া যাইতেছিল। একদিন সেই জাহাজের লোকেরা দেখিল যে, তিনটা বড়-বড় তিমি জাহাজ হইতে খানিক দূরে খেলা করিতেছে। সকলে জাহাজের উপর দাঁড়াইয়া সেই খেলা দেখিতেছে। এমন সময় ভয়ঙ্কর এক সাপ জলের ভিতর হইতে মাথা তুলিয়া সকলের বড় তিমিটাকে জড়াইয়া ফেলিল।
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, তিমিঙ্গিল, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৬৩
- কয়লা ঘুঁটেতে যেন সাপে আর নেউলে
ঝরিয়াকে করে দিক একদম দেউলে।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আজ হল রবিবার— খুব মোটা বহরের, ছড়া- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৯
- বেজি যখন সাপের সঙ্গে লড়াই করে তখন তার দৃষ্টি থাকে সাপের ঘাড়ের কাছে, ঠিক ফণাটির পিছনে। সেখানে কামড় দিয়ে ধরলে সাপ আর উলটে ছোবল মারতে পারে না।
- সুকুমার রায়, লড়াইবাজ জানোয়ার, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬৪
- তাহার কথা শুনিয়া অবাক্ হইয়া গেলাম—তুমি সাপ খেলাবে কি? কামড়ায় যদি? ইন্দ্র উঠিয়া গিয়া ঘরে ঢুকিয়া একটা ছোট ঝাঁপি এবং সাপুড়ের বাঁশি বাহির করিয়া আনিল; এবং সুমুখে রাখিয়া ডালার বাঁধন আল্গা করিয়া বাঁশিতে ফুঁ দিল। আমি ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া উঠিলাম। ডালা খুলো না ভাই, ভেতরে যদি গোখ্রো সাপ থাকে! ইন্দ্র তাহার জবাব দেওয়াও আবশ্যক মনে করিল না, শুধু ইঙ্গিতে জানাইল যে, সে গোখ্রো সাপই খেলাইবে; এবং পরক্ষণেই মাথা নাড়িয়া নাড়িয়া বাঁশী বাজাইয়া ডালাটা তুলিয়া ফেলিল।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব), দশম পরিচ্ছেদ, শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব)-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক-গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, সপ্তদশ মুদ্রণ, পৃষ্ঠা ৫৯
- বাবুরাম সাপুড়ে, কোথা যাস্ বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা, দুটো সাপ রেখে যা—
যে সাপের চোখ্ নেই, শিং নেই নোখ্ নেই,
ছোটে না কি হাঁটে না, কাউকে যে কাটে না,
করে নাকো ফোঁস্ফাঁস্, মারে নাকো ঢুঁশঢাঁশ,
নেই কোন উৎপাত, খায় শুধু দুধ ভাত—
সেই সাপ জ্যান্ত গোটা দুই আনত?
তেড়ে মেরে ডাণ্ডা ক’রে দেই ঠাণ্ডা।- সুকুমার রায়, বাবুরাম সাপুড়ে, আবোল তাবোল, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৩৪
- হাতিরা তাকে মাথায় করে নদীতে নিয়ে যেত, শুঁড়ে করে জল ছিটিয়ে গা ধুইয়ে দিত, তারপর তাকে সেই সাপের পিঠে বসিয়ে দিত—এই তার রাজসিংহাসন। দুদিকে দুই হাতি পদ্মফুলের চামর ঢোলাত, অজগর ফণা মেলে মাথায় ছাতা ধরত।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজপুরে, শকুন্তলা- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- সিগনেট প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫০-৫২
- ইন্দ্র মহাব্যস্ত হইয়া বলিল, খুলো না দিদি, তোমার পায়ে পড়ি—মস্ত একটা সাপ ঘরে ঢুকেচে। তিনি আমার মুখের পানে চাহিয়া কি যেন ভাবিয়া লইলেন। তার পরে একটুখানি হাসিয়া পরিষ্কার বাঙলায় বলিলেন, তাই ত! সাপুড়ের ঘরে সাপ ঢুকেছে, এ ত বড় আশ্চর্য্য! কি বল শ্রীকান্ত? আমি অনিমেষ দৃষ্টিতে শুধু তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলাম।—কিন্তু কি ক’রে সাপ ঢুকল ইন্দ্রনাথ? ইন্দ্র বলিল, ঝাঁপির ভেতর থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। একেবারে বুনো-সাপ।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব), দশম পরিচ্ছেদ, শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব)-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক-গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, সপ্তদশ মুদ্রণ, পৃষ্ঠা ৬০-৬১
- এই ভাবিয়া সাপ গর্ত্তের ভিতর গেলেন। ব্রহ্মা দেখিলেন প্রমাদ; সাপ গর্ত্তে গেলেন, মানুষদংশন করে কে? এই ভাবিয়া তিনি সাপকে ল্যাজ ধরিয়া টানিয়া বাহির করিলেন, সাপ বাহিরে আসিয়া, আবার মুখ দেখাইতে হইল, এই ক্ষোভে মাথা কুটিতে লাগিল; মাথা কুটিতে কুটিতে মাথা চেপ্টা হইয়া গেল, সেই অবধি সাপের ফণা হইয়াছে।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দুর্গেশনন্দিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
- কিছুক্ষণ থেকে সাপুড়ের বাঁশীর আওয়াজ কাণে আসছিল, নিতাই চলে গেলে নাগা লঞ্চ থেকে নেমে সাপ খেলানো দেখতে গেল। একটা দোকানের সামনে সাপুড়েকে ঘিরে ভিড় জমেছে আর ভিড়ের ঠিক সামনেই দাড়িয়ে আছে পঞ্চ।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নবম পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮০
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় সাপ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে সাপ শব্দটি খুঁজুন।
উইকিমিডিয়া কমন্সে সাপ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।