অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ([১৯শে সেপ্টেম্বর ১৯০৩ - ২৯শে জানুয়ারি ১৯৭৬) বিশিষ্ট বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথশরৎচন্দ্রের পরে সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কল্লোল যুগের লেখকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।

  • ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যের –এক নেই রাজ্যের বাসিন্দে।
    ওদের কিছু নেই
    ভিটে নেই ভিত নেই রীতি নেই নীতি নেই
    আইন নেই কানুন নেই বিনয় নেই ভদ্রতা নেই
    শ্লীলতা-শালীনতা নেই।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ছন্নছাড়া [১]
  • ঘরে-বাইরে উদাহরণ যা আছে
    তা ক্ষুধাহরণের সুধাক্ষরণের উদাহরণ নয়,
    তা সুধাহরণের ক্ষুধাভরণের উদাহরণ–
    শুধু নিজের দিকে ঝোল- টানা।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ছন্নছাড়া [২]
  • কোথ্বকে আসছে সেই অতীতের স্মৃতি নেই।
    কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেই বর্তমানের গতি নেই
    কোথায় চলেছে নেই সেই ভবিষ্যতের ঠিকানা।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ছন্নছাড়া [৩]
  • সেচ-হীন ক্ষেত
    মণি-হীন চোখ
    চোখ-হীন মুখ
    একটা স্ফুলিঙ্গ-হীন ভিজে বারুদের স্তুপ।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ছন্নছাড়া [৪]
  • প্রাণ আছে, প্রাণ আছে– শুধু প্রাণই আশ্চর্য সম্পদ
    এক ক্ষয়হীন আশা
    এক মৃত্যুহীন মর্যাদা।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ছন্নছাড়া [৫]
  • চামারের ছেলে চামড়া ছোঁবে না,
    কসাই ছেড়েছে ছুরি;
    মুটে মোটে আর মোট বহিবে না -
    নামায়ে রেখেছে ঝুড়ি।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ধর্মঘট [৬]
  • বস্তা যাহারা বয় আর যারা
    বস্তিতে বাস করে,
    খোলা রাস্তায় বরা দখিনায়
    নিশ্বাস আজি ভরে।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ধর্মঘট [৭]
  • দখিনার ফুঁয়ে গিয়াছে উড়িয়া
    করাটের ছেঁড়া চট
    আকাশে বাজিছে ছুটির ঘন্টা,
    আজিকে ধর্মঘট।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ধর্মঘট [৮]
  • কত রোষকষায়িত কশা, কত বলদর্পিত বুট
    কত বর্বর বুলেট
    ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে তোমাদের,
    কিন্তু বজ্রমুষ্টি শিথিল করতে পারেনি,
    স্খলিত করতে পারেনি তোমাদের পতাকার উদ্ধতি,
    নমিত করতে পারেনি তোমাদের দুষ্পরাজেয় প্রতিজ্ঞা
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, স্বাধীনতা [৯]
  • স্মরণ করি তোমাদের
    যারা ফাঁসির রজ্জুকে মনে করেছে কন্ঠলগ্ন কোমল ফুলমালা
    মৃত্যুতে দেখেছ অমরত্বের রাজধানী
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, স্বাধীনতা [১০]
  • শক্তির বিলাস নহে, তপস্যায় শক্তি আবিষ্কার,
    শুনিয়াছি সীমাশুন্য মহা-কাল-সমুদ্রের ধ্বনি
    আপন বক্ষের তলে; আপনারে তাই নমস্কার।
    চক্ষে থাক আয়ু-উর্মি, হস্তে থাক অক্ষয় লেখনী!
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, আবিষ্কার [১১]
  • মানুষ ঈশ্বরকে হত্যা করল,
    মানুষকে বাঁচিয়ে দিলেন ঈশ্বর।
    মানুষ ঈশ্বরকে দিল নশ্বরতা,
    ঈশ্বর মানুষকে দিলেন অমরত্ব।
    ঈশ্বর মানুষ হলেন,
    মানুষ এবার ঈশ্বর হবে।
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, মানুষ ঈশ্বর হবে [১২]
  • তুমি ছাড়া কে পারিতো
    নিয়ে যেতে অবারিত
    মরণের মহাকাশে মহেন্দ্রের মন্দির-সন্ধানে
    তুমি ছাড়া আর কার
    এ উদাত্ত হাহাকার
    হেথা নয় হেথা নয় অন্য কোথাও অন্য
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ [১৩]
  • হে ঝটিকা, অতিথি আমার,
    নটবর,হে ভোলা ভৈরব,
    শুরু কর ধ্বংসের তাণ্ডব
    মোর সুপ্ত জীর্ণ বক্ষতলে,
    স্পন্দনে স্পন্দনে তারে
    আন্দোলিয়া তোলো তুমি ক্রন্দনের আনন্দ-কল্লোলে
    • অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ঝটিকা [১৪]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা