আবদুল হামিদ খান ভাসানী
বাঙালি রাজনীতিবিদ
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ – ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬; যিনি মওলানা ভাসানী নামেই সমধিক পরিচিত) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে “মজলুম জননেতা” হিসেবে খ্যাত। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে তাকে "লাল মওলানা" নামেও অভিহিত করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সভাপতি।
উক্তি
সম্পাদনা- আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না।
- ১৯৭২ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত, সাপ্তাহিক হক কথা পত্রিকায় মাওলানা ভাসানী এটি ঘোষণা দিয়েছিলেন।[১]
- এভাবেই যদি পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর শাসন-শোষণ চলতে থাকে, তবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে পূর্ব বাংলার মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি আসসালামু আলাইকুম জানাবে। তোমাদের পথ তোমরা দেখো, আমাদের পথ আমরা দেখব।
- ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী
- যেসব মুসলমান হিন্দুদের বিধর্মী মনে করে, তাদের ক্ষতি করতে চায়, আমি তাদের বলি তোমরা কারা? খুব বেশি হইলে চার-পাঁচ পুরুষ আগে তোমরা কারা ছিলা? তোমাদের বাপ-দাদার বাপ-দাদারা ছিলেন হয় হিন্দু নয় নমঃশূদ্র। এ দেশের হিন্দু আর মুসলমানের একই রক্ত। কতজন আরব ইরান-আফগানিস্তান হইতে আসিয়াছে? পাঁচ পুরুষ আগে যারা ছিলো তোমাদের পূর্বপুরুষ আজ তাদের গায়ে হাত তুলতে তোমাদের বুক কাঁপে না? তোমরা কি মানুষ না পশু?
- সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের বিরুধীতা করে মাওলানা ভাসানী এটি বলেছিলেন।[২]
- ধর্মের সঙ্গে ভাষার কোন সম্পর্ক নাই। ধর্ম এক জিনিস আর ভাষা আর একটি জিনিস। একটির সঙ্গে অন্যটিকে যারা মেশায় তারা অসৎ ও মতলববাজ। উর্দুর সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক কী? আরব দেশের মানুষ উর্দুতে কথা বলে নাকি? ইরানের মানুষ কি উর্দু জানে? উর্দু কি দুনিয়ার সব মুসলমানের ভাষা? বাংলাকে যারা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা চায় তারা পাকিস্তানের দুশমন নয়। যারা চায় না তারাই পাকিস্তানের দুশমন। পাকিস্তানের যদি ক্ষতি হয় তাহলে বাংলা-বিরোধীদের দ্বারাই হবে।
- পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মাওলানা ভাসানী এটি বলেন।[৩]
- যারা ইসলামের নামে, রবীন্দ্রনাথের উপর আক্রমণ চালাচ্ছেন, তারা আসলে ইসলামের সত্য ও সুন্দরের নীতিতে বিশ্বাসী নন।
- ১৯৬৭ সালের জুন মাসের দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশিত মাওলানা ভাসানীর বিবৃতি।[৪]
- পূর্ব বাংলা থেকে হিন্দুরা চলে গেলে বাঙালি কালচার নষ্ট হয়ে যাবে।[৫]
- ২১-দফার পূর্ণ রূপায়ণের জন্য আমাদের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন চালাইয়া যাইতে হইবে। ইহা সারা পাকিস্থানের সামাজিক ও আর্থিক পরাধীনতার হাত হইতে মুক্তির মহান সনদ, ইহা যেন আমরা কখনও বিস্মৃত না হই।
- কাগমারী সম্মেলন সংক্রান্ত প্রচারপত্র, ৩রা ফেব্রুয়ারী ১৯৫৭, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র- প্রথম খন্ড, সম্পাদনা- হাসান হাফিজুর রহমান, প্রকাশক- হাক্কানী পাবলিশার্স, ঢাকা, প্রকাশসাল- ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯৩
ভাসানী সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- বল্লমের মতো ঝলসে ওঠে তার হাত বারবার
অতিদ্রুত স্ফীত হয়, স্ফীত হয়, মৌলানার সফেদ পাঞ্জাবি,
যেন তিনি ধবধবে একটি পাঞ্জাবি দিয়ে সব
বিক্ষিপ্ত বে-আব্রু লাশ কী ব্যাকুল ঢেকে দিতে চান।- সফেদ পাঞ্জাবি, দুঃসময়ে মুখোমুখি (১৯৭৩), শামসুর রাহমান (চন্দন চৌধুরী (সম্পাদক)। শ্রেষ্ঠ কবিতা। কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ২৯। আইএসবিএন 9847012002957। )
- মওলানার টুপিওয়ালা উঁচু মাথাটি যেন
এক হারিয়ে যাওয়া পর্বতের স্মৃতি- আল মাহমুদ। "মওলানা ভাসানীর স্মৃতি"। কবিতাসংগ্রহ। অক্ষর প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১১৭। আইএসবিএন 9789849016045।
- মওলানা ভাসানীর মতো নেতা টাঙ্গাইলে আছেন এটা সারা বাংলাদেশের গর্ব। বাংলাদেশের ইতিহাস তিনি সৃষ্টি করেছেন। মওলানা ভাসানী না থাকলে এই বাংলাদেশের জন্ম হতো না। তিনি ছিলেন মজলুম জননেতা।
- বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ভাসানী না থাকলে বাংলাদেশের জন্ম হত না: ফরিদা আখতার | বিডি নিউজ ২৩। ০৭ অক্টোবর ২০২৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে আবদুল হামিদ খান ভাসানী সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।