খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বেগম খালেদা জিয়া (জন্ম: আগস্ট ১৫, ১৯৪৫), জন্মগত নাম খালেদা খানম পুতুল, একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী রূপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় মহিলা সরকারপ্রধান (বেনজির ভুট্টোর পর)। তার স্বামী জিয়াউর রহমানের শাসনকালে তিনি ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও দলনেত্রী, যা তার স্বামী জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

উক্তি
সম্পাদনা- আমার এই স্বজনহীন জীবনে দেশবাসীই আমার স্বজন। আল্লাহ আমার একমাত্র ভরসা। আমি যেমন থাকি, যেখানেই থাকি, যতক্ষণ বেঁচে থাকব দেশবাসীকে ছেড়ে যাব না।
- সুবিচার নিয়ে সংশয় খালেদা জিয়ার | কালেরকণ্ঠ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
- এদের পচতে আরো একটু সময় দিতে হবে। এজন্য আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। এই আওয়ামী লীগ একদিন পঁচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াবে। ... আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই সরকার জনবিক্ষোভে ‘করুণভাবে’ বিদায় নেবে। সবাই যখন এদের বিরুদ্ধে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে, তখন তারা জনগণের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।
- তিনি (শেখ মুজিব) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হত না।
- ছাত্র, তরুণরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মেধা, যোগ্যতা জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ি তুলতে হবে। শোষণহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সকল ধর্ম গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি, প্রগতি আর সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে। আসুন আমরা তরুণদের হাত শক্তিশালী করি। ধ্বংস নয় প্রতিশোধ নয় , প্রতিহিংসা নয় ভালোবাসা শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।
- হাসপাতাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিলেন খালেদা জিয়া। ঢাকা টাইমস। ০৭ আগস্ট ২০২৪।
- তখন আমার নামে ছিল ৪টা মামলা। আর হাসিনার নামে ছিল ১৫টা মামলা। ক্ষমতায় আসার পর তাঁর ১৫টি মামলা হঠাৎ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু আমার ৪টা বাড়তে বাড়তে এখন ৩৬টি। তাদের নেতা-কর্মীদের সাড়ে ৭ হাজার মামলা তুলে নিয়েছে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে।
- খালেদার সাজা হলে শক্ত আন্দোলন | প্রথম আলো ৩০ অক্টোবর ২০১৮।
- আন্দোলনের বাতাস শুরু হলে চুল তো থাকবেই না, অস্তিত্বেও টান পড়তে পারে। জনগণের আন্দোলনের বাতাসে চুল এলোমেলো হয়ে যাবে। দিশেহারা হয়ে যাবেন।
- সংবিধান থেকে একচুলও নড়বো না: শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ১৯ আগস্ট ২০১৩। প্রথম আলো।
- মুক্তিযুদ্ধকালে সত্যিকারে যারা সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করেছিল বিএনপিও তাদের বিচার চায়। কিন্তু সেটি হতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্মত, স্বচ্ছ।
- একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সবাইকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে এ কথা বলেন।
- বলা হয়, এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত শহীদ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, এটা নিয়েও বিতর্ক আছে।
- পদ্মাসেতু জোড়া তালি দিয়ে বানানো হচ্ছে, এ সেতুতে কেউ উঠবেন না।
- দেশে আজ সত্যিকারের সংসদ নেই। নেই বিরোধী দল। শাসকদের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। সশস্ত্র বাহিনীর সর্ম্পকে বৈরী প্রচারণা ও ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাড় করানো হয়েছে।[উৎস প্রয়োজন]
- আমি সগৌরবে দেশবাসীকে জানাতে চাই, আমি কোনও দুর্নীতি করিনি, সঠিক বিচার হলে আমি বেকসুর খালাস পাব।[উৎস প্রয়োজন]
- ওদের হাতে গোলামীর জিঞ্জির আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা।[উৎস প্রয়োজন]
খালেদা জিয়াকে নিয়ে উক্তি
সম্পাদনা- ঢাকা, মেজর জিয়াউর রহমান, পাক আর্মি, তোমার কাজে আমরা সবাই খুশি। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে, তুমি ভালো কাজ করছ। খুব তাড়াতাড়ি তুমি নতুন কাজ পাবে। তোমার পরিবার নিয়ে চিন্তা কোরো না। তোমার স্ত্রী ও সন্তানরা ভালো আছে। মেজর জলিল সম্পর্কে তোমাকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কর্নেল বেগ, পাক আর্মি, মে ২৯, ১৯৭১[২]
- সূত্র: দৈনিক বাংলা, তারিখ: ২রা জানুয়ারি, ১৯৭২, শিরোনাম: মেজর জিয়ার পরিবারের উপর পাক বাহিনীর নির্যাতনের বিবরণ, মেজর জিয়া যখন দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন হানাদার খান সেনারা তখন তাঁর পরিবার পরিজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মনজুর আহমদ প্রদত্ত। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বীর নায়ক মেজর (বর্তমানে কর্নেল) জিয়া যখন হানাদার পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদেরকে নাজেহাল করে তুলছিলেন, তখন তাঁর প্রতি আক্রোশ মেটাবার ঘৃণ্য পন্থা হিসেবে খান সেনারা নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁর আত্মীয়স্বজন পরিবার-পরিজনদের ওপর। তাদের এই প্রতিহিংসার লালসা থেকে রেহাই পান নি কর্নেল জিয়ার ভায়রা শিল্পোন্নয়ন সংস্থার সিনিয়র কো-অর্ডিনেশন অফিসার জনাব মোজাম্মেল হক। চট্টগ্রাম শহর শত্রু কবলিত হবার পর বেগম খালেদা জিয়া যখন বোরখার আবরণে আত্মগোপন করে চট্টগ্রাম থেকে স্টিমারে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে পৌঁছেন, তখন জনাব মোজাম্মেল হকই তাঁকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেদিন ছিল ১৬ই মে। ঢাকা শহরে কারফিউ। নারায়ণগঞ্জেও সন্ধ্যা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এরই মধ্যে তিনি তাঁর গাড়িতে রেডক্রস ছাপ এঁকে ছুটে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ টার্মিনালে। বেগম জিয়াকে নিয়ে আসার দিন দশেক পর ২৬শে মে শিল্পোন্নয়ন সংস্থায় হক নাম সংবলিত যত অফিসার আছেন সবাইকে ডেকে পাক সেনারা কর্নেল জিয়ার সঙ্গে কারোর কোনো আত্মীয়তা আছে কিনা জানতে চায়। জনাব মোজাম্মেল হক বুঝতে পারলেন বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তিনি সেখানে কর্নেল জিয়ার সাথে তাঁর আত্মীয়তার কথা গোপন করে অসুস্থতার অজুহাতে বাসায় ফিরে আসেন এবং অবিলম্বে বেগম জিয়াকে তাঁর বাসা থেকে সরাবার ব্যবস্থা করতে থাকেন। কিন্তু উপযুক্ত কোনো স্থান না পেয়ে শেষপর্যন্ত ২৮শে মে তিনি তাঁকে ধানমণ্ডিতে তাঁর এক মামার বাসায় কয়েক দিনের জন্য রেখে আসেন এবং সেখান থেকে ৩রা জুন তাঁকে আবার জিওলজিক্যাল সার্ভের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জনাব মুজিবুর রহমানের বাসা এবং এরও কদিন পরে জিওলজিক্যাল সার্ভের ডেপুটি ডিরেক্টর জনাব এস কে আব্দুল্লাহর বাসায় স্থানান্তরিত করা হয়। এরই মধ্যে ১৩ই জুন তারিখে পাক বাহিনীর লোকেরা এসে হানা দেয় জনাব মোজাম্মেল হকের বাড়িতে। জনৈক কর্নেল খান এই হানাদার দলের নেতৃত্ব করছিল। কর্নেল খান বেগম জিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং জানায় যে, এই বাড়িতে তারা বেগম জিয়াকে দেখেছে। জনাব হকের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে তাঁর দশ বছরের ছেলে ডনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডন কর্নেল খানকে পরিষ্কারভাবে জানায় যে, গত তিন বছরে সে তার খালাকে দেখে নি। সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলে খান সেনারা তাঁর বাড়ি তল্লাশী করে। কিন্তু বেগম জিয়াকে সেখানে না পেয়ে হতোদ্যম হয়ে ফিরে যায়। যাবার আগে জানিয়ে যায়, সত্যি কথা না বললে আপনাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপরই জনাব হক বুঝতে পারেন সর্বক্ষণ তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছে। যেখানেই যান সেখানেই তাঁর পেছনে লেগে থাকে ফেউ। এই অবস্থায় তিনি মায়ের অসুখের নাম করে ছুটি নেন অফিস থেকে এবং সপরিবারে ঢাকা ছেড়ে যাবার ব্যবস্থা করতে থাকেন। ব্যবস্থা অনুযায়ী ১লা জুলাই গাড়ি গ্যারেজে রেখে পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে তাঁরা দুটি অটোরিকশায় গিয়ে ওঠেন। উদ্দেশ্য ছিল ধানমণ্ডিতে বেগম জিয়ার মামার বাসায় গিয়ে আপাতত ওঠা। কিন্তু সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত আসতেই একটি অটোরিকশা তাঁদের বিকল হয়ে যায়। এই অবস্থায় তাঁরা কাছেই গ্রীনরোডে এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে ওঠেন। কিন্তু এখানে তাঁদের জন্যে অপেক্ষা করছিল এক বিরাট বিস্ময়। জনাব হক এখানে গিয়ে উঠতেই তাঁর এই বিশিষ্ট বন্ধুর স্ত্রী তাঁকে জানান যে, কর্নেল জিয়ার লেখা চিঠি তাঁদের হাতে এসেছে। চিঠিটা জনাব হককেই লেখা এবং এটি তাঁর কাছে পাঠাবার জন্যে কয়েকদিন ধরেই তাঁকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাঁর কাছে লেখা কর্নেল জিয়ার চিঠি এ বাড়িতে কেমন করে এলো তা বুঝতে না পেরে তিনি যারপরনাই বিস্মিত হন এবং চিঠিটা দেখতে চান। তাঁর বন্ধুর ছেলে চিঠিটা বের করে দেখায়। এটি সত্যই কর্নেল জিয়ার লেখা কিনা বেগম জিয়াকে দিয়ে তা পরীক্ষা করিয়ে নেবার জন্যে তিনি তাঁর বন্ধুর ছেলের হাতে দিয়েই এটি জিওলজিক্যাল সার্ভের জনাব মুজিবর রহমানের কাছে পাঠান। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় জনাব হক তাঁর এই বন্ধুর বাসায় রাতের মতো আশ্রয় চান। তাঁদেরকে আরো নিরাপদ স্থানে রাখার আশ্বাস দিয়ে রাতে তাঁদেরকে পাঠানো হয় সূত্রাপুরের একটি ছোট্ট বাড়িতে। তাঁর বন্ধুর ছেলেই তাঁদেরকে গাড়িতে করে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। এখানে ছোট্ট একটি ঘরে তাঁরা আশ্রয় করে নেন। কিন্তু পরদিনই তাঁরা দেখতে পেলেন পাক-বাহিনীর লোকেরা বাড়িটি ঘিরে ফেলেছে। জনাদশেক সশস্ত্র জওয়ান বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে। এই দলের প্রধান ছিল ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ আর ক্যাপ্টেন আরিফ। তারা ভেতরে ঢুকে কর্নেল জিয়া ও বেগম জিয়া সম্পর্কে তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জনাব হক ও তাঁর স্ত্রী জিয়ার সাথে তাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে যান। কিন্তু ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ জনাব ও বেগম হকের সাথে তোলা বেগম জিয়ার একটি গ্রুপ ছবি বের করে দেখালে তাঁরা জিয়ার সাথে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। তবে তাঁরা জানান কর্নেল ও বেগম জিয়া কোথায় আছেন তা তাঁরা জানেন না। এই পর্যায়ে বিকেল পাঁচটার দিকে জনাব হক ও তাঁর স্ত্রীকে সামরিক বাহিনীর একটি গাড়িতে তুলে মালিবাগের মোড়ে আনা হয় এবং এখানে মৌচাক মার্কেটের সামনে তাঁদেরকে সন্ধ্যে পর্যন্ত গাড়িতে বসিয়ে রাখা হয়। এখানেই তাঁদেরকে জানান হয় যে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে দ্বিতীয় রাজধানী এলাকা ঘুরিয়ে আবার সূত্রাপুরের বাসায় এনে ছেড়ে দেয়া হয়। এখান থেকে রাতে তাঁরা গ্রীনরোডে জনাব হকের বন্ধুর বাসায় আসেন এবং সেখান থেকে ফিরে আসেন খিলগাঁয়ে তার নিজের বাসায়। উল্লেখযোগ্য যে এই দিনই জনাব এস কে আব্দুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বেগম জিয়া ও জনাব আব্দুল্লাহকে এবং একই সাথে জনাব মুজিবর রহমানকেও পাক-বাহিনী গ্রেফতার করে। এবং ৫ই জুলাই তারিখে জনাব মোজাম্মেল হক অফিসে কাজে যোগ দিলে সেই অফিস থেকেই ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। ক্যান্টনমেন্টে তাঁকে এফ আই ইউ (ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন ইউনিট) অফিসে রাত দশটা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয় এবং দশটায় তাঁকে স্কুল রোডের সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেলে প্রবেশের আগে তাঁর ঘড়ি, আংটি খুলে নেয়া হয় এবং মানিব্যাগটিও নিয়ে নেয়া হয়। সারাদিন অভুক্ত থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কিছুই খেতে দেয়া হয় নি। পরদিন সকালে তাঁকে এক কাপ মাত্র ঠাণ্ডা চা খাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাপ্টেন সাজ্জাদের অফিসে। সাজ্জাদ তাঁর কাছে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানতে চায়। তিনি তাঁর কোনো পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেন। ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ এতে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করে এবং শাস্তি হিসেবে তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেবার হুমকি দেখায়। কিন্তু এরপরও কোনো কথা আদায় করতে না পেরে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁকে হাজার ওয়াটের উজ্জ্বল আলোর নিচে শুইয়ে রাখার হুকুম দেয়। হুকুম মতো রাতে তাঁকে তাঁর সেলে চিৎ করে শুইয়ে মাত্র হাত দেড়েক ওপরে ঝুলিয়ে দেয় পাঁচশ পাওয়ারের দুটি অত্যুজ্জ্বল বাল্ব। প্রায় চারঘণ্টা অসহ্য যন্ত্রণা তাঁকে ভোগ করতে হয়। পরদিন আবার তাঁকে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সাজ্জাদ আবার তাঁর পরিকল্পনার কথা জানতে চায়। জানতে চায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর কী কী কথা হয়েছে, তিনি ভারতে চলে যাবার পরিকল্পনা করেছিলেন কিনা। জনাব হক এসব কিছুই অস্বীকার করলে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁর ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত হানে। এরপর তাঁর সেলে চব্বিশ ঘণ্টা হাজার ওয়াটের বাতি জ্বালিয়ে রাখার হুকুম দেয়। বেলা একটায় তাঁকে সেলে এনেই বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ঘণ্টা কয়েক পরেই তিনি অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার করে তিনি একটি কথাই বলতে থাকেন- আমাকে একবারেই মেরে ফেল। এভাবে তিলে তিলে মেরো না। তিনি যখন অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন, তখন তাঁর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল একজন পাঠান হাবিলদার। তাঁর এই করুণ আর্তি বোধ হয় হাবিলদারটি সইতে পারে নি। তারও হৃদয় বোধহয় বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল মানুষের ওপর মানুষের এই নিষ্ঠুর জুলুম দেখে। আর ভাই বোধহয় সে সেন্ট্রিকে ডেকে হুকুম দিয়েছিল বাতি নিভিয়ে দিতে। বলেছিল, কোনো জীপ আসায় শব্দ পেলেই যেন বাতি জ্বালিয়ে দেয়, আবার জীপটি চলে যাবার সাথে সাথেই যেন বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। এরপর ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁকে আরো কয়েকদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং নতুন ধরনের নির্যাতন চালায়। তাঁর কাছ থেকে সারাদিন ধরে একটির পর একটি বিবৃতি লিখিয়ে নেয়া হয় এবং তাঁর সামনেই সেগুলি ছিঁড়ে ফেলে আবার তাঁকে সেগুলি লিখতে বলা হয়। এবং যথারীতি আবার তা ছিঁড়ে ফেলে আবার সেই একই বিবৃতি তাঁকে লিখতে বলা হয়। এবং আবার তা ছিড়ে ফেলা হয়। এই অবস্থায় ক্লান্তি ও অবসন্নতায় তিনি লেখার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। এদিকে হাজার ওয়াটের উজ্জ্বল আলোর নিচে থাকার ফলে তিনি দৃষ্টিশক্তিও প্রায় হারিয়ে ফেলেন। দিন ও রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্যই বুঝতে পারতেন না। ২৬শে জুলাই বিকেলে তাঁকে ইন্টার স্টেটসঞ্জিনীং কমিটির (আই এস এস সি) ছাউনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে একটি ছোট্ট কামরায় তাঁরা মোট ১১০জন আটক ছিলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে বের করে রান্নাঘরের বড় বড় পানির ড্রাম ভরার কাজ দেয়া হয়। এই কাজে আরো একজনকে তাঁর সাথে লাগানো হয়। তিনি হচ্ছেন, জিওলজিক্যাল সার্ভের জনাব এস কে আব্দুল্লাহ্। তাঁরা দুজনে প্রায় পোয়া মাইল দূরের ট্যাপ থেকে বড় বড় বালতিতে করে পানি টেনে তিনটি বড় ড্রাম ভরে দেন। রাতে লাইন করে দাঁড় করিয়ে তাঁদেরকে একজন একজন করে খাবার দেয়া হয়। এতদিন পরে এই প্রথম তিনি খেতে পান গরম ভাত ও গরম ডাল। পরদিন সকালে তাঁর এবং আরো অনেকের মাথার চুল সম্পূর্ণ কামিয়ে দেয়া হয়। এখানে বিভিন্ন কামরায় তাঁকে কয়েকদিন আটকে রাখার পর ৬ই আগস্ট নিয়ে যাওয়া হয় ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে (এফ আই সি)। মেজর ফারুকী ছিল এই কেন্দ্রের প্রধান এবং এখানে সকলের ওপর নির্যাতন করার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিল সুবেদার মেজর নিয়াজী। ফারুকী এখানে তাঁকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাকে বিবৃতি দিতে বলে। কিন্তু বিবৃতি লেখানোর নাম করে সেই পুরনো নির্যাতন আবার শুরু হয়। একটানা তিনদিন ধরে তিনি একই বিবৃতি একের পর এক লিখে গেছেন এবং তাঁর সামনে তা ছিঁড়ে ফেলে আবার এই একই বিবৃতি তাঁকে লিখতে বলা হয়েছে। ৯ই আগস্ট তাঁকে দ্বিতীয় রাজধানীতে স্থানান্তরিত করা হয় এবং এখানে বিভিন্ন কক্ষে তাঁকে প্রায় দেড়মাস আটক রাখার পর ২১শে সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৩০শে অক্টোবর তিনি মুক্তি পান। ইতিমধ্যে রাজাকাররা তিনদফা তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে সর্বস্ব লুটপাট করে নিয়ে যায়। সর্বশেষ গত ১৩ই ডিসেম্বর তারা তাঁর গাড়িটিও নিয়ে যায়। "সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: ৮ম খণ্ড (পৃষ্ঠা: ৪৭৬) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়
- হুমায়ুন আহমেদ, জোছনা ও জননীর গল্প, ২০০৬, পৃ: ৪০৯-৪১৪
- প্রিয় জেনারেল জামশেদ, আমার স্ত্রী খালেদা আপনার হেফাজতে আছেন। যদি আপনি তার সাথে সম্মান ও শ্রদ্ধার সহিত আচরণ না করেন, তাহলে কোন একদিন আমি আপনাকে খুন করব। মেজর জিয়া
- হুমায়ুন আহমেদ, জোছনা ও জননীর গল্প, ২০০৬, পৃ: ৪০৭-৪০৮
- খালেদা জিয়া যখন বারবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সেনানিবাস ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান, তখন জেনারেল জিয়া আমাকে বলেছিলেন যে যুদ্ধের পর তিনি তাকে তালাক দেবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে তা হয়নি।
- আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, ১৬ মে ২০১৭, লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৎকালীন প্রেস সচিব নাদিম কাদিরের "মুক্তিযুদ্ধ: অজানা অধ্যায়" উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখাকালে [৩]
- এদেশে লক্ষ কোটি টাকা লোপাট আর পাচার হয়। বহু চোর থাকে মহাদাপটে। জিয়ার নামে ট্রাষ্টে দুকোটি টাকা বেড়ে চার-পাচ কোটি টাকা হয়েছে। তবু খালেদা জিয়া শাস্তি পেয়েছেন। সেটিও মূলত তার কর্মর্তাদের গাফলতি আর ভুলের কারণে।
এক টাকাও আত্নসাৎ করেননি খালেদা জিয়া। তবু তার নামে অপপ্রচার হয় এতিমের টাকা মেরে দেয়ার। কিন্তু কোন অপপ্রচার মুছতে পারবে না তার অতুলনীয় জনপ্রিয়তা, মুছে দিতে পারবে না তার আত্নত্যাগ।- আসিফ নজরুলের ফেসবুক পোস্ট। নয়া দিগন্ত। ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় খালেদা জিয়া সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে খালেদা জিয়া সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।