গোলাপ
ফুল
গোলাপ হলো রোজেই পরিবারের রোসা গণের এক প্রকারের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই গণের তিন শতাধিক প্রজাতি এবং কয়েক হাজার জাত রয়েছে। বেশিরভাগ গোলাপের প্রজাতি এশিয়ার স্থানীয়। এছাড়াও ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় স্বল্প সংখ্যক দেশীয় প্রজাতিও দেখা যায়। গোলাপ সাধারণত ফুলের জন্য বাগানে বা বাড়ির ভেতরে শোভাবর্ধনকারী হিসেবেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ সুগন্ধি এবং ফুল হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। খ্রিস্টপূর্বের আগের থেকেই গোলাপ চাষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। গোলাপের নানা বর্ণ ও সুগন্ধ মানুষের মনকে বরাবর আকৃষ্ট করে এসেছে।
উক্তি
সম্পাদনা- গোলাপ, গোলাপ, শুধু গোলাপের রাশি!
গোলাপের রং ছিল অনন্ত আকাশে,
গোলাপের গন্ধ ছিল ধরাতে বাতাসে,
নারীর অধরে ছিল গোলাপের হাসি॥- প্রমথ চৌধুরী, অপরাহ্ন, সনেট-পঞ্চাশৎ - প্রমথ চৌধুরী, প্রকাশক- সিদ্ধেশ্বর মেসিন প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩
- গোলাপ ফুল ফুটিয়ে আছে, মধুপ, হোথা যাস নে—
ফুলের মধু লুটিতে গিয়ে কাঁটার ঘা খাস নে।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রেম ও প্রকৃতি, গীতবিতান- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৪০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৭৩
- বাজ্ল কখন বিসর্জ্জনের বাঁশী,
আঁধার এল মুগ্ধ আঁখির ’পরে;
গোলাপ যখন ফুট্ছে রাশি রাশি
গোলাপ-ফুলের ভক্ত গেল মরে’!- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কবি দেবেন্দ্র, বিদায়-আরতি- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- আর, এইচ, শ্রীমানী এণ্ড সন্স, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৬৮
- পাংখাবাড়ি থেকে কারসিয়ং দুধারে ঝরনা আর চা বাগান সবজী-খেত, থাকে-থাকে পাহাড়ের গায়ে পাহাড়ি বস্তি, সাহেবদের কুঠি, কার্সিয়ং শহরটা যেন আর একটা ঝরনার মতো দেখা যাচ্ছে—পাহাড়ি গোলাপ গেঁদা গাছা-আগাছার কুঁড়ি ধরেছে।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, টুং-সোন্নাটা-ঘুম, বুড়ো আংলা- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- সিগনেট প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৭
- গোলাপ ফুলের মধ্যে সৌন্দর্যের একটি অসীমতা আছে তাহার কারণ, সে সম্পূর্ণরূপেই গোলাপ ফুল— সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ, কোনো অনির্দিষ্টতা নাই। এইজন্যই গোলাপ ফুলের মধ্যে এমন একটি আবির্ভাব সুস্পষ্ট হইয়াছে যাহা চন্দ্রসূর্যের মধ্যে, যাহা জগতের সমস্ত সুন্দরের মধ্যে। সে সুনিশ্চিত সত্যরূপে গোলাপ ফুল বলিয়াই সমস্ত জগতের সঙ্গে তাহার আত্মীয়তা সত্য।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সীমার সার্থকতা, পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৭-১৬৮
- বেড়াইতে বেড়াইতে দেখিল, বাগানের এই নানা রকম সুগন্ধ সুদৃশ্য অপরিচিত পুষ্পবৃক্ষের এক পাশে একটি গোলাপের গাছ, সেই গাছে একটি সুন্দর প্রস্ফুটিত গোলাপ। লাবণ্য সেই গোলাপটি তুলিতে হাত বাড়াইল! এই সময় সহসা কোথা হইতে পূর্ব্বেকার পরীটি আসিয়া বলিলেন, “ইহা তুলিও না, ঐ দেখ কত ধৈর্য্য ফুল ফুটিয়া রহিয়াছে—উহার একটি তোল, গোলাপ অপেক্ষা দেখ ঐ ফুলগুলি কত সুন্দর।
- স্বর্ণকুমারী দেবী, সুবুদ্ধির উপদেশ, গল্পস্বল্প- স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯-১০
- রক্ত গোলাপের ডালটার দিকে—
যতবার হাত বাড়িয়েছি
গোলাপের বদলে পেয়েছি
গাঢ় রক্তে রঞ্জিত হাত।- অজ্ঞাত, ইচ্ছা, শান্তির স্বপক্ষে, প্রকাশক- দেববাণী প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮
- কাগজখানি আলােকের দিকে ধরিলাম; দেখিলাম, জলের অক্ষরে কি একটা কোম্পানীর নাম লেখা রহিয়াছে। সম্ভবত সেই কোম্পানিই ঐ প্রকারের চিঠির কাগজ প্রস্তুত করিয়া বিক্রয় করিয়া থাকে। কাগজখানি গোলাপের গন্ধে ভর্ভর করিতেছে। বুঝিলাম, পত্র-লেখক সামান্য ব্যক্তি ন’ন।
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, শান্তির স্বপক্ষে- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- দারোগার দপ্তর কার্য্যালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪-৫
- গোলাপ ফুলকে সুন্দর বলি এইজন্যেই যে, গোলাপ ফুলের দিকে আমার মন যেমন করে চেয়ে দেখে ইঁটের ঢেলার দিকে তেমন করে চায় না। গোলাপ ফুল আমার কাছে তার ছন্দের রূপে সহজেই সত্তা-রহস্যের কী-একটা নিবিড় পরিচয় দেয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরিশিষ্ট-১৫ই ফেব্রয়ারি, ১৯২৫, পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৯
- দূর হতে আমি গোলাপেরি মত ঠিক!
তবু আমোদিত করিতে পারি নে দিক!
গোলাপেরি মত অতুলন মম হাসি,
তবু হায় অলি ফিরে যায় কাছে আসি’!- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, করবী, ফুলের ফসল - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান্ প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, পৃষ্ঠা ৩৬
- —গোলাপী রঙের গরু হয় নাকি? —না হুজুর। একটি ভাল গরুকে সাত দিন ধরে সেরেফ গোলাপ ফুল, গোলাপ জল আর মিছরি খাওয়াতে হবে, খড় ভূষি জল একদম বারণ। তার পর সে যা দুধ দেবে তার রং হবে গোলাপী আর খোশবায় ভুর ভুর করবে।
- রাজশেখর বসু, রাজভোগ, গল্পকল্প - পরশুরাম, রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় গোলাপ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে গোলাপ শব্দটি খুঁজুন।
উইকিমিডিয়া কমন্সে গোলাপ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।