মাহফুজ আলম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

মাহফুজ আলম (মাহফুজ আবদুল্লাহ নামেও পরিচিত) হচ্ছেন ২০২৪-এর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাবেক বিশেষ সহকারী এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের একজন দপ্তর বিহীন উপদেষ্টা। তিনি ২০২৪ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়ার জন্য আলোচিত হন।

  • যারা '৭২ এর সংবিধানে তথা মুজিববাদে এখনো বিশ্বাস করে, তারা এ দেশের শত্রু। যারা গত ১৬ বছরের কালচারাল ফ্যাসিজমের ভাষা এবং ভঙ্গি এখনো ব্যবহার করে, তারা এ দেশের শত্রু। যারা বিন্দুমাত্র অনুশোচনা এবং ক্ষমা প্রার্থনা বাদে প্রগতিশীলতার বা ধর্মের কোরাম আকারে বিভিন্ন ব্যানারে ঢুকে পড়ছে, তারা দেশের শত্রু। যারা জেনে বুঝে এ রক্তখেকোদের আশ্রয় দিচ্ছে, তারাও এ দেশের শত্রু।
  • যাঁরা ১৯৭১ সালের আকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছেন। সেটা করা যাবে না। ১৯৭১-কে পাশ কাটিয়ে এগোতে চাইলে তা আত্মঘাতী হবে।১৯৭১ সালের মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে এখনকার মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে যুক্ত করতে হবে। ... সংবিধান পুনর্লিখন করতে হলে তা ১৯৭১–এর মানুষের আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিক হতে হবে। ... ১৯৭২ সালের সংবিধান আদর্শিকভাবে একপক্ষীয় ছিল। সেখানে দলের মূলনীতি ও সংবিধানের মূলনীতি এক ছিল।
  • গণ-অভ্যুত্থান কোন ব্যাকরণ মেনে হয়না বা হয়নি। ফলে, এটার দার্শনিক পাটাতন পুরাতন ভাবাদর্শিক প্রবণতা দ্বারা নির্ধারিত হয়নি। ভাবাদর্শিক কাজিয়া করে এটার ব্যাখ্যা দিতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। বরং, একটা নূতন ভাবাদর্শিক পরিগঠন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে এবং হবে। সেখানে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা মুক্ত মোর্চাগুলো সম্মিলিত হয়ে নূতন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাবে।
  • এদেশকে মুজিববাদী এবং খারেজি তাকফিরি ইসলাম পন্থীদের খেলার জায়গা বানাতে দেয়া হবে না। এ মাটি তাদের না! তারা এ মাটির সাথে বেঈমানি করেছেন। ভুলে যাবেন না, জঙ্গিবাদীরাই সাবেক বিএনপি জামায়াত সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের দীর্ঘদিনের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এ দুই ক্যাম্পকে সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ভাবে প্রতিহত করতে হবে।
  • আমি (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের) মাস্টারমাইন্ড ছিলাম না। তবে ৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমার সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া হয়ছিল। ... ৯ দফাসহ অন্যান্য দফা আমার থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। গত পাঁচ বছর ধরে সকল প্রোগ্রাম ও বয়ান আমার হাতে লেখা হয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জগুলো পার করতে পারলে আপনারা অবশ্যই সব জানতে পারবেন।
  • আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট ছিল যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির যে বয়ান আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে, সেটি টিকিয়ে রেখে আওয়ামী লীগকে কখনোই পরাজিত করা যাবে না।
    মুক্তিযুদ্ধের পরে আওয়ামী লীগের কারণে জাতীয়ভাবে রিকনসিলিয়েশন (পুনর্মিলন) না হতে পারা একটা বড় ব্যর্থতা। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে শত্রু বানিয়ে রেখেছে। খালি চোখে আমরা হয়তো কেবল জামায়াত–শিবিরকে দেখব, কিন্তু তাদের নামে সব সময় বড় একটা জনগোষ্ঠী নিপীড়িত হয়েছে।
  • আমাদের প্রাথমিক বাসনা ছিল সারা বাংলাদেশে ছাত্রশক্তিকে বিস্তৃত করা। ... আমাদের ভাবনা ছিল ছাত্রশক্তি আগে শক্তিশালী হবে, তারপর আমরা রাজনৈতিকভাবে আবির্ভূত হব। ... আন্দোলনের ৫ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সময়টা ছাত্রশক্তির সদস্যরা সমগ্র বাংলাদেশে আন্দোলনের সাংগঠনিক বিস্তার ঘটালেন। ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আমরা সেই অর্থে কোনো রাজনৈতিক, এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থনও পাইনি। ... আমরা ভাবছিলাম, একে বড় একটা ছাত্র-নাগরিক আন্দোলনে পরিণত করে তোলা যায় কি না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সাল, কিন্তু সুযোগ তৈরি হলে এখনই কেন নয়!
  • রাষ্ট্র যদি ইসলামকে জায়গা করে দিতে চায়, তাহলে তো ইসলামই সীমিত ও নিপীড়নের অনুষঙ্গ হয়ে যাবে। ইসলামি উম্মাহর ধারণা তো বিশ্বজনীন। জাতিরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটা খাটে না। বিদ্যমান জাতিরাষ্ট্রের কাঠামোয় ইসলাম বা শরিয়াহ বাস্তবায়ন অসম্ভব। ... যদি পুরোপুরি শরিয়াহর প্রশ্ন আসে, তাহলে শরিয়াহও পাওয়া যাবে না, রাষ্ট্রও না। রাষ্ট্র একটা ত্রিশঙ্কু দশায় পড়বে। এখানকার মুসলমানরা আরও খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়ে যাবে। আলেমদের এটা বোঝা উচিত। রাষ্ট্রের ভেতরে ধর্মের মীমাংসা সেরে ফেলা উচিত।
  • নাগরিক হিসেবে অবশ্যই সবার সমান হিস্যা থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় পরিসরের দিক থেকে মৌলিক যে নাগরিক অধিকার, তা তো একজন মুসলমানের জন্য যা, একজন আহমদিয়া, হিন্দু, বৌদ্ধ, চাকমা, সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসীর জন্যও একই হতে হবে।
  • বাংলাদেশে তরুণের সংখ্যা বিপুল। পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংস্কার না করলে, আদর্শের প্রশ্নে বড় সংস্কার না করলে মানুষ কেন তাদের ভোট দেবে? ‘না’ ভোটের বিকল্প থাকলে সে সংখ্যা বরং বেড়ে যাবে।
  • যাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নাই গণহত্যা নিয়ে, তাদের সাথে নো রিকন্সিলিয়েশন। আগে বিচার, তারপর সমঝোতা! মুজিববাদের বিরুদ্ধে এবার হবে প্রত্যাঘাত। খুনীদের ক্ষমা নাই। খুনীদের আদর্শের ফেরিওয়ালাদের ক্ষমা নাই। নির্মূলের রাজনীতি আমরা করতে চাই নাই। কিন্তু, আমাদের রক্ত পান করতে যারা শ্লোগান দিবে, রাজনীতি করবে- সেসকল মুজিববাদীদের কোনভবেই ক্ষমা করা হবে না। দু'হাজার বা ততোর্ধ্ব শহিদের আত্মার শপথ, কোন সুশীল বা গুন্ডা মুজিববাদীদের এ স্বদেশের এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেয়া হবে না।
    ফ্যাসিস্ট মুজিব হাসিনা
    মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ।।

মাফফুজ আলম সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • কেউ যদি ভেবে থাকেন, মাহফুজ আলম একা, তাহলে তারা মারাত্মক ভুল করবেন। আমরা যারা মাহফুজের সাথে আছি, আমরা থাকবই। কারন মাহফুজ হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে হাজির হয়নি। সমাজের দ্বন্দ্ব সংগ্রামের মধ্য থেকেই তরুণরা হজির হয়েছে। তারাই ভবিষ্যত। সমাজকে চিনুন, মাহফুজদেরও চিনবেন। মাহফুজ, আখতার, নাহিদ, আসিফ, নুসরাত, আরিফ, তুষার, উমামা, হাসনাত, সারজিস, নাজিফা, আবু বকর, তরিকুল, সানজানাদের পয়দা করতে একটি জনগোষ্ঠির দশকের পর দশক লেগে যায়।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা