হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী

বাঙালি রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের ৫ম প্রধানমন্ত্রী

হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। তিনি অবিভক্ত বাংলার সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী ও পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৭ সালে ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের সাথে প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী
  • আমি বরাবরই বাংলার ভবিষ্যৎ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করে আসছি, কোনরূপ ভারতীয় রাষ্ট্রসংঘের অংশ হিসেবে নয়। অনুরূপ কোন রাষ্ট্র একবার সংস্থাপিত হলে, তার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার ওপর। … বাংলা যদি মহান হতে চায় তবে সে শুধু তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই তা হতে পারবে। তাকেই নিজের সম্পদের অধিকারী ও নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হতে হবে।
    • হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী [১]
  • বাংলাদেশ (অখণ্ডরূপে) স্বাধীন না হলে বাংলার হিন্দুদের বিশেষ মর্যাদা থাকবে না। (ভারতে) তাদের ভাষা ও কৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অন্যান্য প্রদেশ বাংলাদেশকে শোষণ করবে।
    • ডন, ৯ মে,১৯৪৭ [২]
  • হিন্দুগণ সার্বভৌম অবিভক্ত বাংলা নীতিগতভাবে মেনে নিলে আমি তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য বহু দূর পর্যন্ত যেতে রাজি আছি
    • ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল দিল্লীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এটি বলেন।[৩]
  • যেতে তো হবেই, তবে এখন এই হতভাগা মুসলমানদের জন্য কিছু একটা না করে যাই কি করে? দেখো না, সমস্ত ভারতবর্ষে কি অবস্থা হয়েছে, চারদিকে শুধু দাঙ্গা আর দাঙ্গা। সমস্ত নেতা চলে গেছে, আমি চলে গেলে আর এদের উপায় নেই।

তার সম্পর্কে

সম্পাদনা
  • সে সময়কার বাংলার প্রধানমন্ত্রী জনাব এইচ. এস. সোহরাওয়ার্দী আরও অশুভ এবং ফলপ্রসূ এমন সব কথা বলেছিলেন, যার পূর্ণ শক্তি সম্ভবত সেই সময় দেশ উপলব্ধি করতে পারেনি। আমরা কায়েদ-ই-আজমের (মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ) আহ্বানের অপেক্ষায় আছি।
  • মুসলিম লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে এসব নেতা ও সংগঠনের মনোভাব ও উদ্দেশ্য প্রকাশ পেয়েছে, যাদের নীতি ও কর্মসূচী তারা তৈরি করেছে। ১৯৪৬ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বরের কলকাতা গণহত্যার মাত্র দুই সপ্তাহ পরে স্যার শাফাত আহমেদ খানের উপর হামলার পর এবং দেশের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে বাংলার প্রধানমন্ত্রী জনাব এইচ এস সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন: "মুসলিম ভারত মানে ব্যবসা।
  • মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর ডাইরেক্ট অ্যাকশন বক্তৃতায় ইয়াসমিন খান লিখেছেন, 'তিনি যদি স্পষ্টভাবে সহিংসতায় উসকানি না দেন, তাহলে অবশ্যই জনতাকে এই ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে তারা দায়মুক্তির সাথে কাজ করতে পারে, পুলিশ বা সামরিক বাহিনীকে ডাকা হবে না এবং মন্ত্রণালয় শহরে যে কোনও পদক্ষেপের দিকে নজর দেবে না।
    • ইয়াসমিন খান (২০০৭) দ্য গ্রেট পার্টিশন: দ্য মেকিং অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃ. এম এ খান ইসলামিক জিহাদে উদ্ধৃত ৬৪: জোরপূর্বক ধর্মান্তর, সাম্রাজ্যবাদ এবং দাসত্বের উত্তরাধিকার (২০১১)
  • আমরা অবহিত হয়েছি যে সোহরাওয়ার্দী কার্যত জনতাকে তাঁর হাতের তালুতে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি কখনো উর্দু, কখনো বাংলায় কথা বলেন। তিনি সমবেত জনতার সকল অংশকে সন্তুষ্ট করতে সফল হয়েছিলেন। সন্দেহাতীতভাবে সোহরাওয়ার্দী একজন চালাক মানুষ। দুটি বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা তাঁর উদ্ভাবনপটুতার উদাহরণ তৈরি করে। নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি জনগণকে বলেন, তাঁরা কি জানতেন নিরাপত্তা আইনে কী আছে? এরপর তিনি বলেন, যখন কেউ সরকারের সমালোচনা করে, তখন পুলিশ এগিয়ে আসে এবং বিচার ছাড়াই তাদের কারাগারে প্রেরণ করে। আবার ভাষার ইস্যুতে তিনি মন্তব্য করেন যে উর্দু হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা। এটা শুনে যখন কতিপয় বাঙালি তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন, তখন তিনি তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, পাকিস্তানের কোনো রাষ্ট্রভাষা ছিল কি না। তখন তিনি যুক্তিজাল বিস্তার করেন যে রাষ্ট্রভাষা হবে বাঙালির জন্য বাংলা, পাঞ্জাবিদের জন্য পাঞ্জাবি, সিন্ধিদের জন্য সিন্ধি প্রভৃতি।
    • ৬ জানুয়ারি ১৯৫১-এ ঢাকার মার্কিন কনসাল চার্লস ডি উইদার্সের পূর্ব পাকিস্তানে সফর সম্পর্কে প্রেরিত বার্তায়, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
  • ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো, কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম, কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।
  • গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উপমহাদেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
  • বাংলাদেশে যারাই বড় মাপের নেতা হয়েছেন, তাদের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তাদের বিরাট আত্মা- 'বিগ হার্ট। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ছিল বিরাট আত্মা, জনগণের জন্য ছিল তার অবারিত দ্বার।
  • হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়েছে, এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না সেটা আমরা আজও জানি না। কোনদিন জানা যাবে সেটাও এই মুহূর্তে বলা যাবে না।
  • শহীদ ভাইয়ের জীবন ছিল একাকী ও দুঃখপূর্ণ। সব মহৎ মানুষের ক্ষেত্রেই তা হয়, তবে শহীদ ভাইয়েরটা আরো বেশি ছিল। তার সত্যিকারের কোনো গার্হস্থ্য জীবন ছিল না।
  • মহান নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গণতান্ত্রিক আদর্শ অনুসরণ করে, জাতি শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার যুদ্ধে ও সংগ্রামে এগিয়ে যাবে।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা