জীবনানন্দ দাশ

অগ্রণী বাঙালি কবি ও ঔপন্যাসিক

জীবনানন্দ দাশ (১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯, বরিশাল - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪, বঙ্গাব্দ: ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ - ৫ কার্তিক, ১৩৬১) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি। তাঁকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত।

আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;
-জীবনানন্দ দাশ
   

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে—এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়—হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;

"আবার আসিব ফিরে", রূপসী বাংলা, প্রকাশক- সিগনেট প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
  • বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।
  • জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
    অন্য সবাই এসে বহন করুক : আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
    আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
    হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
    নক্ষত্রের নিচে।
    • উনিশশো চৌত্রিশের, জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতাসমগ্র, আবু হাসান শাহরিয়ার সম্পাদিত, প্রকাশক- সাহিত্য বিকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ- ফেব্রুয়ারি ২০০৮, দ্বিতীয় মুদ্রণ- ফেব্রুয়ারি ২০১০, পৃষ্ঠা ৬৩৮
  • তোমার হৃদয়ে গায়ে আমাদের জনমানবিক
    রাত্রি নেই। আমাদের প্রাণে এক তিল
    বেশি রাত্রির মতো আমাদের মানবজীবন
    প্রচারিত হ’য়ে গেছে ব’লে—
    নারি,
    সেই এক তিল কম
    আর্ত রাত্রি তুমি।
  • পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
    মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।
    • সুচেতনা, বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাশ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৪
  • আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনাে পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
    প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
    হয় নাকি?
    • দুজন, বনলতা সেন- জীবনানন্দ দাশ, প্রকাশক: অমিতানন্দ দাশ, কলকাতা, অষ্টম মুদ্রণ: অগ্রহায়ণ ১৪২৪ (নভেম্বর ২০১৭), পৃষ্ঠা ৩০
  • জ্ঞান হোক প্রেম -প্রেম শোকাবহ জ্ঞান
    হৃদয়ে ধারণ ক’রে সমাজের প্রাণ
    অধিক উজ্জ্বল অর্থে করেনিকো অশোক আলোক।
    • আলোকপত্র, জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতাসমগ্র, আবু হাসান শাহরিয়ার সম্পাদিত, প্রকাশক- সাহিত্য বিকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ- ফেব্রুয়ারি ২০০৮, দ্বিতীয় মুদ্রণ- ফেব্রুয়ারি ২০১০, পৃষ্ঠা ৫২২
  • সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি—
    এই নদী নক্ষত্রের তলে
    সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন—
    সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
    আমি চ’লে যাব ব’লে
    চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
    নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
    লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
    সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
    • জীবনানন্দ দাশের কাব্য সম্ভার, কে. এম. ফারুক খান প্রকাশিত,রণেশ দাশ গুপ্ত সম্পাদিত,খান ব্রাদার্স এ্যাণ্ড কোম্পানি ৬৭ প্যারীদাস রোড, ঢাকা ১১০০, পৃষ্ঠা:১১৯

জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • আধুনিকতাবাদের আরোহী পর্বে জীবনানন্দ লক্ষ করেছিলেন চিহ্নায়কের শৌর্য ও আমোদ; আর, অবরোহী পর্বের সূচনায় তাঁর কবিতায় ব্যক্ত হয়েছিল কার্নিভালের হাসি ও তিক্ত শ্লেষ।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা