শিশু
জন্ম ও বয়ঃসন্ধির মাঝামাঝি মানব
শিশু হলো মানুষের ভূমিষ্ঠকালীন প্রাথমিক রূপ। জৈবিকভাবে একটি শিশু হলো এমন এক মানুষ যে জন্ম এবং বয়ঃসন্ধির পর্যায় বা শৈশব এবং বয়ঃসন্ধির বিকাশকালীন সময়ের মধ্যে থাকে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সের সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও শিশুর এই সংজ্ঞা নিয়ে অনেকের বিভ্রান্তি রয়েছে।
উক্তি
সম্পাদনা- ছোট শিশু মোরা তোমার করুণা
হৃদয়ে মাগিয়৷ ল’বো,
জগতের কাজে জগতের মাঝে
আপনা ভুলিয়া র’বো।
ছোট তারা হাসে আকাশের গায়ে,
ছোট ফুল ফোটে গাছে;
ছোট বটে, তবু তোমার জগতে
আমাদেরো কাজ আছে।- যোগীন্দ্রনাথ সরকার, প্রার্থনা, শিশু চয়নিকা - যোগীন্দ্রনাথ সরকার, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- সিটি বুক সোসাইটি, প্রকাশস্থান-কলকাতা, পৃষ্ঠা ৫৯
- মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ-দোলায় শুয়ে,
ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে।- সুকুমার রায়, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫০
- শিশু হয়ে এসেছে চিরনবীন, কিশলয়ে তার ছেলেখেলা জমাবার দোসর হয়ে তার সঙ্গে যোগ দিল ওই সূর্যের আলো, সেও সাজল শিশু, সারাবেলা সে কেবল ঝিকিমিকি করছে। সেই তো তার কলপ্রলাপ।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নবীন, বনবাণী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬২
- মা ছেলেকে স্নেহ দিয়া মানুষ করিয়া তোলে, যুগে যুগে মায়ের গৌরবগাথা তাই সকল জনমনের বার্তায় ব্যক্ত। কিন্তু শিশু যা মাকে দেয়, তাই কি কম? সে নিঃস্ব আসে বটে, কিন্তু তার মন-কাড়িয়া-লওয়া হাসি, শৈশবতারল্য, চাঁদ ছানিয়া গড়া মুখ, আধ আধ আবোল-তাবোল বকুনির দাম কে দেয়? ওই তার ঐশ্বর্য, ওরই বদলে সে সেবা নেয়, রিক্ত হাতে ভিক্ষুকের মত নেয় না।
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পথের পাঁচালী, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, পথের পাঁচালী- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সপ্তম সংস্করণ, প্রকাশক- পি. মিত্র, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
- পুঁজিবাদী করে টাকা নিয়ে খেলা, তাদের কুকুরো খায়,
দেখ কত শত শিশু ভগবান ক্ষুধায় মরিয়া যায়;
এমন আইন চাই—
যে আইন-বলে শিশু ও কিশোর বাঁচিবে সর্বদাই।- সুনির্মল বসু, আমাদের দাবী, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৪
- শিশুকে মা যে বেষ্টন করে থাকেন সে কেবল তাঁর বাহু দিয়ে তাঁর শরীর দিয়ে নয়, তাঁর অনুভূতি দিয়ে। সেইটিই হচ্ছে মাতার ভাব, সেই তাঁর মাতৃত্ব। শিশুকে মা আদ্যোপান্ত অত্যন্ত প্রগাঢ়রূপে অনুভব করেন।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্ববোধ, শান্তিনিকেতন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৯
- শিশুরা সাধারণত যেসব স্বপ্ন দেখে তাদের জাগ্রত জীবনেও তার প্রভাব খানিকটা থেকে যায়। মনস্তত্ত্ব ও স্বপ্নতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান থাকলে অভিভাবক বা শিক্ষকের পক্ষে শিশুমন বোঝা অনেকটা সহজ হয়ে পড়ে এবং তখন সবরকম অবাঞ্ছিত প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব হয়।
- সুভাষচন্দ্র বসু, স্কুল জীবন (২), ভারত পথিক- সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- সিগনেট প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৮
- কতকাল ধরিয়া এ-সব সে নীরবে দেখিয়াছে, দেখিয়াছে আর বহিয়াছে। আবার সে দেখিয়াছে কত শিশুর জন্ম, দেখিয়াছে আর ভাবিয়াছে। ভাবী নিগ্রহের নিগড়ে আবদ্ধ এই অজ্ঞ শিশুগুলি জানে না, হাসির নামে কত বিষাদ, সুখের নামে কত ব্যথা, মধুর নামে কত বিষ তাদের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে।
- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক-পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
- এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস॥- সুকান্ত ভট্টাচার্য, ছাড়পত্র, ছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থ, সুকান্ত সমগ্র- সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রকাশক- সারস্বত লাইব্রেরী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭-২৮
- আমরা আপনাকে শিশু অপেক্ষাও অধম করিয়া ফেলি? শিশুরা একলা থাকিলে কি করে? তাহারা ঝিনুক লইয়া, ধূলা-বালি লইয়া ঘর তৈরি করে—আবার ভাঙ্গিয়া ফেলে—আবার তৈরি করে; এইরূপ তাহাদের খেলার আর অন্ত নাই। আর, তুমি চলিয়া গেলে আমি কিনা আপনাকে একলা ভাবিয়া কাঁদিতে বসিব? আমার কি কোন ঝিনুক নাই?—ধূলা-বালি নাই? “কিন্তু শিশুরা নির্ব্বোধ বলিয়াই এইরূপ কার্য্য করে”। আর তুমি জ্ঞানী বলিয়াই আপনাকে অসুখী কর, কেমন কি না? এ তোমার কিরূপ জ্ঞান বল দেখি?
- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, এক্লা থাকা, এপিক্টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- সান্যাল এণ্ড কোং, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬১
- সুধা-তৃপ্ত-কণ্ঠে শিশু পড়িল ঘুমায়ে।
অতৃপ্ত নয়নে দেবী, বদন নুয়ায়ে,
হেরিতে শিশুর কান্তি জন্মিল বিস্ময়।
দেবতা কি হবে শিশু? মনেতে সংশয়।- বিজয়চন্দ্র মজুমদার, দেব শিশু, পঞ্চক মালা - বিজয় চন্দ্র মজুমদার, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭
- বনের তপস্বিনীরা কত ছেড়ে দিতে বলছিলেন, কত মাটীর ময়ূরের লোভ দেখাচ্ছিলেন, শিশু কিছুতে শুনছিল না। এমন সময় রাজা সেখানে এলেন, সিংহ-শিশুকে ছাড়িয়ে সেই রাজ-শিশুকে কোলে নিলেন; দুষ্ট শিশু রাজার কোলে শান্ত হ’ল। সেই রাজশিশুকে কোলে করে রাজার বুক যেন জুড়িয়ে গেল। রাজা তো জানেন না যে এ শিশু তাঁ’রই পুত্র;
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শকুন্তলা - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিতীয় সংস্করণ, আদি ব্রাহ্মসমাজ সংস্করণ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০-৩১
- বাল্য আনন্দেতে হেঁসে,
হিল্লোলে চলেছি ভেসে,
ওই সেই শিশু আমি, শিশু-বিনোদিনী,
শৈশব-হৃদয়ে মম প্রফুল্ল নলিনী।- কালীপ্রসন্ন ঘোষ, স্বপ্ন প্রতিমা, চিত্ত-মুকুর - কালীপ্রসন্ন ঘোষ, প্রকাশসাল- ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ (১২৮৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩১
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় শিশু সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে শিশু সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
উইকিঅভিধানে শিশু শব্দটি খুঁজুন।