২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলন
(২০২৪ -এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ সালে নতুনভাবে আলোচনায় আসে।
স্লোগান
সম্পাদনা- তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে সরকার সরকার/স্বৈরাচার স্বৈরাচার
- চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার
- কোটা না মেধা, মেধা মেধা
- এই মুহুর্তে দরকার, সেনাবাহিনী সরকার [১]
- লাখো শহীদের রক্তে কেনা
দেশটা কারো বাপের না। - দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ [২]
- স্টেপ ডাউন হাসিনা (শেখ হাসিনা পদত্যাগ করুন) [৩]
- তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে’; ‘
- বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না’ এবং ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে.[৪]
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- বীর মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর নন, তাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা সংবিধানসম্মত নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বড় আকারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চিরস্থায়ী করলে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করা হয়।’
- জি এম কাদের, বিরোধীদলীয় নেতা, ৩ জুলাই ২০২৪, জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য
- ‘এত আন্দোলন কিসের রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’
- ওবায়দুল হাসান, ৪ জুলাই ২০২৪, প্রধান বিচারপতি, হাইকোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানিতে দেওয়া বক্তব্য
- ২০১৮ সালে গণ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর নির্বাহী বিভাগ কোটা বাতিল করে যে পরিপত্র জারি করেছিল, আজকে বিচার বিভাগ দিয়ে সেই কোটাকে আবার পুনর্বহাল করা হলো। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা প্রহসন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে এই সমন্বয়হীনতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করুক এবং শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো পূরণ করুক।’
- নাহিদ ইসলাম, ৪ জুলাই, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্য
- রেল ট্রানজিটের নামে ভারতকে একতরফা করিডর দিলে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা ও বৈষম্যমূলক কোটা পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে ’৭১ পূর্ব পাকিস্তানি বৈষম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে যাবে। এই সরকার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একতরফাভাবে ভারতকে রেল করিডর দিয়েছে। এই ডামি সরকার মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আবার নতুন করে কোটা প্রথা চালু করতে চাইছে। ভারতকে করিডর দিয়ে, জনগণের সম্পদ লুটপাটকারীদের সুবিধা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আরও দীর্ঘায়িত করতে চায়। ডামি সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং গণতন্ত্র উদ্ধার করে দেশকে এই ফ্যাসিবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।
- আব্দুল ওহাব মিনার, ৬ জুলাই ২০২৪, যুগ্ম আহ্বায়ক, এবি পার্টি, ট্রানজিটের একতরফা রেল করিডর, কোটা পুনঃপ্রবর্তন বাতিল ও ডামি সরকারের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে বিজয়নগরের বিজয়-৭১ চত্বরে অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতে [৫]
- আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি করা হয়েছে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আরেকটা খুবই ভুল ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে, কোটা এবং মেধা, মনে হতে পারে যে, যারা কোটায় চাকরি করে তাদের কোন মেধা নেই। কিন্তু আবেদন করার ক্ষেত্রে কোটা লাগে না, প্রিলিমিনারিতে কোটা লাগেনা, লিখিততে কোটা লাগেনা। একদম শেষ মুহূর্তে গিয়ে কোটা এপ্লাই হয়। তখন মেধায় আসলে সবাই সমান। আমার সামনে যদি দুইটা অপশন থাকে যে, দুইজনই সমান মেধাবী, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও একজন রাজাকারের সন্তান, আমি অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে চাকরি দিতে চাই। (শেখ হাসিনা: অবশ্যই) জ্বি। সেটা একটা। ফলে মেধা এবং কোটা খুব সহজেই মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাচ্ছে যে সব মেধাবীরা চাকরি না নিয়ে কোটার চাকরি। আপনাকে খুবই ধন্যবাদ যে আপনারা গত ১০-১২ দিন ধরে আন্দোলন করছে আপনারা অসীম ধৈর্যের সাথে আন্দোলন মোকাবেলা করছেন এবং যারা আন্দোলন করছে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে চাকরি না পেয়ে বঞ্চিত। তাদের ক্ষোভের সাথে আমি খুবই একমত। তাদের পেছনে কি অন্য কেউ ইন্ধন যুগিয়ে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি করছে কিনা। আমার আপনার কাছে আবেদন থাকবে যে আপনারা যে ধৈর্য দেখে যাচ্ছেন সেটা দেখিয়ে যদি তাদের সাথে কোন ভাবে তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে, আগামী ৭ই আগস্ট পর্যন্ত কিছু করার নাই কারন সেদিন আপিল বিভাগের শুনানি হবে। তারপর আপিল বিভাগের রায়ের পর হয়তো নির্বাহী বিভাগ কি করবে না করবে। ততদিন তারা যাতে অন্তত বুঝতে পারে সেটা যদি আপনি অনেক সংবেদনশীলতার সাথে যদি বিষয়টা বিবেচনা করেন তাহলে ভালো হয় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
- প্রভাষ আমিন, ১৪ জুলাই ২০২৪, এটিএন নিউজেহেড অফ নিউজ, গনভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
- মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না। অপরাধটা কী? নিজের জীবনবাজি রেখে, সংসার সব ফেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি ভেঙে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশের বিজয় এনেছে। বিজয় এনে দিয়েছিল বলে সবাই উচ্চপদে আসীন। এখানে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা একটা কৌশল। তার মানে হলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবী না, যত রাজাকারের বাচ্চারা-নাতি-পুতিরা হলো মেধাবী, তাই না? এটা ভুলে গেলে চলবে না যাদের মেধাবী না বলছে, তাদের হাতে ওনারা পরাজিত। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হয়েছিল রাজাকারদের বিরুদ্ধে, এই কথাটা মনে রাখা উচিত। তাদের মেধাটা কোথায়? সেটা আমার প্রশ্ন। মেধা কার কত, সেটা পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে, লিখিত পরীক্ষায়, তারপর ভাইভা হয়। সেই সময় যেটা… সেটা বাস্তবতা তো যদি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয় সেই পাবে। আর সব সময় সব কোটা পূর্ণ হয় না। যেটা বাকি থাকে তা তালিকা থেকেই দেওয়া হয়। অনেক চাকরিতে মেধার তালিকা থেকে দেওয়া হচ্ছে। এ নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেখানে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা অগ্রাধিকার পাবে, এটা দিতে হবে।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে গণভবনে এটিএন বাংলার সাংবাদিক প্রভাষ আমিনের "আমরা আসলে মেধায় সবাই সমান। আমার কাছে যদি দুইটা অপশন থাকে, দুইজনই সমান মেধাবী, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও একজন রাজাকারের সন্তান, তাহলে আমি অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেছে নেব।" মন্তব্যে
- আমি লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলাম। শেষ করার আগেই জানতে পারলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রকম্পিত করেছে। এই লেখাটি শেষ করার আর কোনও প্রয়োজন নেই।’ ‘লেখাটি শেষ না করে নিচের অংশটুকু লিখেছি। ঘুমানোর আগে খবরটি দেখে মাথার মাঝে একটা বিস্ফোরণ হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে দাবি করেছে। খবরটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না— এটি কি সত্যিই সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী কি সত্যিই নিজেকে রাজাকার হিসেবে দাবি করতে পারে? শুধুমাত্র একটা সরকারি চাকরির জন্য? কোন দেশের সরকার, বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান? এই ছাত্র-ছাত্রীরা কি জানে, চাকরি অনেক দূরের ব্যাপার, তাদের যে এই দেশের মাটিতে থাকার অধিকার নেই? ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার।’ ‘আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন। সেই জীবনে আবার কেন নূতন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’ ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু চাইবার নেই, স্বাধীন একটা দেশ চেয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলাম। দু’টোই পেয়ে গেছি। এখন যদি আরও কিছু পাই সেটা হবে বোনাস। (তবে অস্বীকার করব না বেনজীর-আবেদ আলীদের সামলে-সুমলে রাখলে একটু আনন্দ পেতাম।)’ ‘আমরা সবাই জানি, একটা দেশে যদি সবাই সমান সুযোগ পায়, সুবিধা পায় আর সবার যদি সমান অধিকার থাকে, তাহলে কোটার কোনও প্রয়োজন নেই। যদি না থাকে তাহলে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা রাখা একটা মানবিক ব্যাপার। অবশ্য মানবিক ব্যাপার কথাটা একটু খানি বইয়ের ভাষা, সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত কয়জনের আর অন্যদের মানবিক ব্যাপার নিয়ে মাথা ব্যথা আছে?’ ‘যদি কোটার ব্যাপারটা সহজভাবে লিখি তাহলে বলা যায়, দুই রকম কোটা আছে একটা ভালো, অন্যটা খারাপ। প্রথমে খারাপটার কথা বলি, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে— পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কোটা, যেটাকে পোষ্য কোটা বলে। আমি খুঁটিনাটি জানি না, সম্ভবত পোষ্য কোটা শুধু শিক্ষকদের জন্য না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্যও খোলা, কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকদের সন্তানদের ছাড়া আর কোনও সন্তান সেই সুযোগ ব্যবহার করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এই পোষ্য কোটা নিয়ে কখনও কোনও উচ্চবাচ্য হতে দেখিনি। যদিও পোষ্য কোটার ছাত্র-ছাত্রীরা পাস করার পর আবার তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক বানাবার একটি নতুন চাপ শুরু হয়, নিজের চোখে দেখা। আর ভালো কোটার উদাহরণ হচ্ছে—...
- মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ১৪ জুলাই ২০২৪, অধ্যাপক ও লেখক [৬]
- কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাঁরা ‘‘আমি রাজাকার’’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব।
- সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ১৫ জুলাই ২০২৪
- কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কতিপয় নেতারা যে সব বক্তব্য রেখেছে, তার জবাব দেয়ার জন্য- আত্মস্বীকৃত রাজাকার, যারা নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে; তার জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমিত থাকবে। আমরা দেখি, রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে, তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।
- ওবায়দুল কাদের, ১৫ জুলাই ২০২৪
- যারা নিজেদেরকে রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে নিয়ে মিছিল করবার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’’
- রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রতিবাদ জানাই।’
- আয়মান সাদিক, ১৫ জুলাই, টেন মিনিট স্কুলের স্বত্ত্বাধিকারী [৮]
- ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে শাবিপ্রবিতে আজীবন নিষিদ্ধ করা হলো।
- আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ওয়ালে ও শাবিপ্রবির বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে, ১৭ জুলাই ২০২৪ [৯]
- মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আমরা খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু তার গতকালকের লেখাটি আমাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীরা যখন খুন হচ্ছে, হামলার শিকার হচ্ছে তখন একজন শিক্ষক হয়ে তিনি এ ধরনের লেখা লিখতে পারেন না। তাই আমরা তাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আজীবনের জন্যে নিষিদ্ধ করেছি। [১০]
- নাম না প্রকাশ করার শর্তে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক শিক্ষার্থী, ১৭ জুলাই ২০২৪, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে [১১]
- জাফল ইকবাল স্যার সম্পর্কে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো কথা বলতে চাই না। আমার ধারণা উনার প্রচণ্ড বুদ্ধিসুদ্ধির অভাব আছে। হয় উনার মধ্যে প্রচণ্ড অপরাধবোধ কাজ করে যে ১৯৭১ সালে উনি কী করেছেন, এই অপরাধবোধ ঢাকার জন্য উনি অতিরিক্ত মুক্তিযোদ্ধা সাজার চেষ্টা করেন। অধ্যাপক জাফর ইকবালের কাছে তার একটাই প্রশ্ন- আপনি কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বোঝেন? আপনি কি পড়াশোনা করেছেন? আপনি কি বাহাত্তর সনে গণপরিষদ বিতর্ক পড়েছেন? তার তো কোনো পড়াশোনাই নাই, সে তো শিক্ষাবিদ দূরের কথা উনি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধক একজন মানুষ।
- আসিফ নজরুল, ১৭ জুলাই ২০২৪ [১২]
- আমাদের সাইট থেকে তার (মুহম্মদ জাফর ইকবালের) সব বই ‘নট অ্যাভেইলেবল’ করে দেওয়া হয়েছে।
- রকমারি ডট কম কর্তৃপক্ষ, ১৭ জুলাই ২০২৪ [১৩]
- শুধু কোটা নয়; গোটা দেশটাই সংস্কারের প্রয়োজন।
- মিজানুর রহমান আজহারী ১৭ জুলাই ২০২৪ বুধবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের পোস্টে তিনি বলেন,[১৪]
- এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। বরং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। আপনজন হারাবার বেদনা যে কত কষ্টের, তা আমার থেকে আর কে বেশি জানে।
- শেখ হাসিনা, ১৭ জুলাই ২০২৪, জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে
- ভাই, পানি লাগবে কারও পানি?
- মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, ১৮ জুলাই ২০২৪, ঢাকায় একটি আন্দোলনে পুলিশের লক্ষহীন এলোপাথাড়ি গুলিতে মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগে ছাত্রদের মাঝে বিনামূল্যে পানি ও বিস্কুট বিতরণ করার সময় [১৫]
- ‘এ আগুন থামান। এ আগুন নেভানোর দায়িত্ব সরকারের। কালবিলম্ব না করে সম্ভব হলে আজ-কালকের মধ্যেই স্পেশাল কোর্ট বসিয়ে সমস্যার সমাধান করুন। সময় খুব কম। আমরাও সরকারে (এরশাদের আমলে) ছিলাম। আমরাও এভাবে আন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলাম। নূর হোসেন মারা যাওয়ার পর অনেকে বলেছিলেন, টোকাই মারা গেছে, কী হবে? কিন্তু আমি বলেছিলাম, না, এই নূর হোসেন একক কোনো ব্যক্তি নয়।’
- কাজী ফিরোজ রশীদ, ১৮ জুলাই ২০২৪, নির্বাহী চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদপন্থী)
- ‘সব ধরনের সহিংসতা ও বলপ্রয়োগ, বিশেষ করে প্রাণহানির ঘটনার অবশ্যই তদন্ত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার।’
- ভলকার টুর্ক, ১৮ জুলাই ২০২৪, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার, এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে
- আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলার! আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান! আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান! আপনি কোন সাহসে আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলেন? আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান! আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান! আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান!
- দীপ্তি চৌধুরী, ১৮ জুলাই, আলোচনা সঞ্চালক, চ্যানেল আইএর টু দ্য পয়েন্ট নামক টকশোতে আলোচক সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক স্টুডিও ছাড়ার আগে তাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করার প্রতিক্রিয়ায় [১৬]
- আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয় আসয়ে নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালবাসা আমি পেয়েছি তা ভুলে থাকতেও পারছি না। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন। আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে যে এমন হল এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত তাও তো ঠিকমতো জানি না। তাও পঁচাত্তর উত্তীর্ণ এই বাংলাভাষী করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি: অনুগ্রহ করে হিংসা হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি: বাংলা ভাষার কসম শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন।” “হানাহানি বন্ধ হোক। বন্ধ হোক উল্টোপালটা কথা বলে দেওয়া। বাঁচুক বাংলাদেশ। বাঁচুন বাংলাদেশের সকলে। জয় বাংলাদেশ। জয় মুক্তিযুদ্ধ। জয় অসংখ্য বাংলাদেশীর শাহাদাত ও অপূরণীয় ক্ষতিস্বীকার। জয় বীরাঙ্গনারা। জয় বাংলা ভাষা!”“বিরোধী হলেই রাজাকার!/ বলে দাও তবে দেশটা কার/ দেশটা কার দেশটা কার!”
- কবীর সুমন, ১৮ জুলাই ২০২৪, ফেসবুক পোস্টে [১৭]
- প্রায় এক মাস হলো আমি নিজের দেশে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরের চ্যানেলে তৃতীয় বিশ্বের কোনো খবরই তেমন একটা চলেনা। আর আমি খুব একটা ফোনের পোকা নই তাই এত খারাপ একটা খবর কানে আসতে দেরি হলো। বাংলাদেশের স্মৃতি নিয়ে স্বস্তিকা লিখেন, ‘এই তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার। চারুকলা যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। প্রতিবার আসি, ব্যস্ততায় যাওয়া হয়না, মা‘ও খুব যেতে চাইতেন বাংলাদেশ, নিয়ে যাওয়া হয়নি। কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, গুলির ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আক্রান্ত। ছাত্র বয়স গেছে সেই কবে, তবে জাহাঙ্গীরনগর আর আমার যাদবপুর খুব কাছাকাছি। কাঠ গোলাপের গাছগুলোও কেমন এক রকম। এক রকম আকাশের মেঘগুলোও। কেবল আজ ওখানে বারুদের গন্ধ।’‘ময়দান ভারী হয়ে নামে কুয়াশায়, দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ, তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ণচূড়া? নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই, তোমার ছিন্ন শির, তিমির।’ এমন এক আপ্যায়নপ্রিয় জাতি দেখিনি, খাবারের নিমন্ত্রণ যেন শেষ হতেই চায় না, অমন সুন্দর করে সারা রাস্তা জুড়ে ভাষার আল্পনা আর কোথায় দেখবো? নয়নজুড়ানো দেওয়াল লেখা? এ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের শপথ নেওয়া একটা জাতির পক্ষেই সম্ভব। আজ অস্থির লাগছে। আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে। অনেকটা দূরে আছি, এই প্রার্থনাটুকুই করতে পারি। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেই আমাদের আলো, আলো হোক, ভাল হোক সকলের।
- বাংলাদেশে থাকা যেসব মানুষ ভোগান্তির মধ্যে আছেন, তাঁদের জন্য আমার প্রার্থনা ও সহমর্মিতা রইল।
- এনজো ফার্নান্দেজ, ১৯ জুলাই ২০২৪, ২০২২ সালের কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন জাতীয় ফুটবল দলের মিডফিল্ডার, ফেসবুকের এক পোস্টে [২০]
- এটা অবশ্যই কারফিউ। এটা নিয়ম অনুযায়ীই হবে এবং সেটা শুট অ্যাট সাইট হবে।
- ওবায়দুল কাদের, ২০ জুলাই ২০২৪, গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের পর কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্য [২১]
- দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি, তখন দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনা পালায়নি, পালায় না। আমি জানি ব্যবসা বানিজ্য সচল রাখতে হবে। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা দরকার। যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কারা করলো? এবার অতো সহজে ছাড়া হবে না। ধ্বংসযঞ্জে চালিয়ে দেশকে ধ্বংস করবে? আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই যাতে দেশের ভাবমূর্তি ঠিক থাকে। ভাবমূর্তি ঠিক না থাকলে ব্যবসা লাটে উঠবে।
- শেখ হাসিনা, ২২ জুলাই ২০২৪, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে
- সরকার আগে থেকে আন্তরিক হলে মৃত্যু কমানো যেতো। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছিল, সেটা তো শেষ পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয়েছে। এটাই যদি শুরুতে উদ্যোগ নিয়ে করা হতো তাহলে তো এত প্রাণহানি হতো না। বরং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে উস্কানি দিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা না করালে হয়ত পরিস্থিতি এ দিকে যেতো না। ফলে আমি মনে করি, সরকার আন্তরিক হলেই প্রাণহানি কমতো।
- সাখাওয়াত হোসেন ২৫ জুলাই ২০২৪, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে [২২]
- সরকার দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।
- জুনাইদ আহমেদ পলক, ২৭ জুলাই ২০২৪, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, ‘শান্তির জন্য বৃক্ষ’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। [২৩]
- এখানে আমার তো কোনও চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো ছেলে-মেয়েদের জন্যও কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া... নিজেরাই চাকরি করে লেখাপড়া করেছে। আমি কতটুকুইবা তাদের জন্য করতে পেরেছি। কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আজ অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান; সবই তো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলাম, তখনই তাণ্ডব করে ঠিক যে জায়গাগুলো (প্রতিষ্ঠান) মানুষের সেবা করবে, সে জায়গাগুলোতে আঘাত করা হলো। সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আর সেই শাটডাউন শেষ হয় না, কী কারণে আমি বুঝি না। আমরা তো সবগুলো দাবিই মেনে নিয়েছি। একটা মানলে আরেকটা, আরেকটা মানলে আরও একটা! আর এর ফল আজকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সব একদিকে ছারখার, আর আজকে কত মানুষ জীবন হারালো! কতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে! কতগুলো মানুষ...।
- শেখ হাসিনা, ২৭ জুলাই ২০২৪, আন্দোলনে আহতদের দেখতে শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল)-এ [২৪]
- মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দিকেই যেন তাদের বেশি ক্ষোভ। আমার একটা কথা নিয়ে কত দিন প্রতিবাদ করল, কী কথা বলেছিলাম আমি? আমার কথাটাকে বিকৃত করা হয়েছিল। তাদের স্লোগানটা কী? ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার। তোমার বাবা, আমার বাবা, রাজাকার রাজাকার’। তার মানে তারা নিজেদেরই রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিল। আমি তো তাদের রাজাকার বলিনি, তারা নিজেরাই স্লোগান দিয়ে নিজেদের রাজাকার হিসেবে পরিচিত করল সবার কাছে।”
- শেখ হাসিনা, ২৭ জুলাই ২০২৪, বিটিভি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনকালে।
- আপনাদেরও সাহায্য চাই। যদি আপনারা কিছু জানেন, আমাদের জানাবেন। কারণ, এভাবে বারবার বাংলাদেশে সহিংসতা, এটা আর হতে দেওয়া হবে না। এ কারণে আপনাদের সাহায্য চাই। এমন জানোয়ারের মতো বর্বরতা কেউ কেউ করতে পারে? একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের লাশ ঝুলিয়ে রাখতে পারে? যারা এগুলোর সাথে জড়িত, অবশ্যই এদের বিচার করতে হবে। তা না হলে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না। আমি তো বুঝি আপনাদের বেদনা। প্রতিনিয়ত বাপ-মা-ভাই-বোনদের হারানোর ব্যথা নিয়ে আমাদের চলতে হয়। লাশটাও দেখতে পারিনি, কাফন-দাফনটাও করতে পারিনি। দেশেও ফিরতে পারিনি। ছয় বছর দেশে ফিরতে দেয়নি আমাকে। যখন দেশে এসেছি, সারা দেশ ঘুরেছি। এই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছি। সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে, এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাবে- এটা তো কাম্য না। আপনাদের কাছে শুধু এইটুকু বলবো, আপনারা সবুর করেন। আর আল্লাহকে ডাকেন যেন এই সমস্ত খুনি-জালেমের হাত থেকে আমাদের দেশটা রেহাই পায়। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, পাশে আছি। আমারও আপনাদের চোখের পানি দেখতে হচ্ছে। এটিই সবচেয়ে কষ্টের।
- শেখ হাসিনা, ২৮ জুলাই ২০২৪, গণভবনে কোটা আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে
- কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যধিক বলপ্রয়োগের বিষয়ে সামনে আসা নানা প্রতিবেদনের বিষয়েও তিনি শঙ্কিত। যে-কোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে জাতিসংঘ মহাসচিব তার ম্যান্ডেট অনুসারে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
- দেশের সিভিল সার্ভিস থেকে শুরু করে সমস্ত সরকারি চাকরিতে সকলের বৈধভাবে প্রতিযোগিতা করার অধিকার থাকবে কিনা থাকবে না, এটি রাজনৈতিক প্রশ্ন। কিন্তু এর সমাধানের দিকে না গিয়ে দেশের সরকার প্রথমে উপেক্ষা করতে চেয়েছে, পরবর্তীতে দমননীতি অবলম্বন করেছে নিজের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে। সেটা থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের শুরু। এখনো হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করার জন্য চেষ্টা করছে। এই হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে। এর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক তদন্ত দরকার। গতকাল (৩০ জুলাই ২০২৪) শোক দিবসের নামে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সেখানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য শোক পালনের জন্য কালো ব্যাজ পরিধান করতে বলেছেন। আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা লাল ব্যাজ পরেছি। তারপরও তাঁদের তাঁরা শহীদ বলতে রাজি নন। তাহলে তাঁরা যদি শহীদ না হন, তাঁদের জন্য তাহলে প্রার্থনা করার দরকার কী? এ ধরনের অজস্র স্ববিরোধী আপনারা পাবেন। সরকার এখন এ হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার জন্য অজুহাত দিচ্ছে। তারা মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা করেছে, সেতু ভবনে হামলা করেছে অথবা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে হামলা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উন্নয়নের প্রতীকগুলো ধ্বংস করার জন্য বিরোধীরা এই আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। তবে দেশের মানুষ এটাকে মেনে নিল কেন? মানুষ যেটাকে দম্ভের প্রতীক মনে করে সেটিতে হামলা করে। এই সরকারের বৈধতার একমাত্র দাবি, তারা উন্নয়ন করেছে গত দেড় দশকে, আইয়ুব খানের এক দশক ছিল, শেখ হাসিনার দেড় দশক হয়েছে। এই শহরের মানুষ যে সরকারের উন্নয়নকে প্রত্যাখ্যান করেছে সেটা দেখা যায়। মানুষ যখন তথাকথিত উন্নয়নের প্রতীকে আক্রমণ করে তখন প্রথমে দেখে মনে হবে দুর্ঘটনা, কিন্তু না, এর পেছনে কারণ আছে। কেউ কি বিশ্বাস করেন এ সরকারের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার করতে পারে? না। কারণ, তারা নিজেরাই হত্যাকারী। যারা নিজেরাই রাজাকার, খুনি, বিশ্বাসঘাতক তারা অপরকে বলে রাজাকার, খুনি, বিশ্বাসঘাতক। পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় পরিহাস আর কী আছে। ক্ষমতার সর্বোচ্চ কেন্দ্রের চারদিকে আজ রাজাকারেরা বসে আছে। যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারি বাহিনীর হামলার ফলে সাধারণ ছাত্ররা জেগে উঠল তাদের বিরুদ্ধে, তারা যখন পরাজয়ের মুখে, তখন তাদের সরিয়ে নিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। তখনই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। গুলিতে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা আমাদের পথপ্রদর্শক। সংকটের উৎপত্তি কোথায়, সেদিকে না গিয়ে সরকার বলছে এই দল, সেই দলকে নিষিদ্ধ করব। সেটা সমস্যাকে আরও বাড়াবে। এজন্য এখন দরকার রাজনৈতিক সমাধান। বর্তমান সরকারকে ক্ষমা প্রার্থনা করে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ ছাড়া নতুন কোনো ব্যবস্থা আমরা দিতে পারব না।
- আমি ঘুমাতে পারি না, যখন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর গল্প পড়ি। যে ছেলেটা আন্দোলনে গিয়েছিল বিস্কুট ও পানি দেওয়ার জন্য। সে মারা যাওয়ার আগেও বলছিল, কারও পানি লাগবে, পানি লাগবে? এ অবস্থায় তাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
- আসিফ নজরুল, ৩১ জুলাই ২০২৪ [২৯]
- একটা জিনিস গেলে আবার গড়ে তোলা যায় কিন্তু একটা জীবন গেলে, প্রাণ গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না! যারা আপনজন হারিয়েছে, যে মা তার সন্তান হারিয়েছে, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছে, তাদের কষ্ট আর কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি! কারণ আজকে এই আগস্ট মাস আমি তো বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে এই বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম নিজে ছোট ছোট বাচ্চাদের মাতৃস্নেহবঞ্চিত করে, কেন? বাংলাদেশের মানুষের জন্য। এই দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে, স্বাধীনতার সুফল পাবে। প্রত্যেকে পেট ভরে ভাত খাবে, প্রত্যেকে লেখাপড়া শিখবে, দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে। বাংলাদেশ উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে, বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসন পাবে। যে মর্যাদা আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পেয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যা আমরা হারিয়েছিলাম, আবার সেই মর্যাদা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমি কিন্তু এনেছিলাম। বাংলাদেশ বিশ্বে সেই মর্যাদা পেয়েছে। সেই জায়গায় আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম। আজকে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিটি জায়গায় নেতিবাচক একটা মনোভাব হয়ে গেছে। এই যে এতদিন এত শ্রম দিলাম, এত কষ্ট, নিজের দিকে তো তাকাইনি! নিজের ছেলে-মেয়ের তো কিছু করিনি! যেটুকু করেছি, এ দেশের মানুষের জন্য।
- শেখ হাসিনা, ১ আগস্ট ২০২৪, জাতীয় শোক দিবস স্মরণে আলোচনাসভায় বক্তব্যে [৩০]
- ...আপনাদের দুজনের কাছেই প্রশ্ন, তবে, পানি লাগবে কিনা, পানির বোতল কিন্তু আছে, আপনার ওখানে? পানি লাগবে পানি? হ্যাঁ, এরকম একটা বোতল আছে। মুগ্ধ আমাদের জন্য অনেকগুলো পানির বোতল রেখে গিয়েছে। সেই পানি এখানেও আছে।... (কয়েক সেকেন্ডের জন্য আবেগআপ্লুত হয়ে বাকরুদ্ধ থেকে আবার স্বাভাবিক হয়ে ভারী গলায়)... অগাস্ট মাস আমাদের শোকের মাস... অগাস্ট এর আগে জুলাইতে এমন করে শোক পালন করতে হবে...(ক্রন্দনরত) আমরা কেউ ভাবি নি।.. কিছুক্ষণ আগে আপনাকে একটা ঘটনার কথা বললাম,.. আপনি শুনেছেন, আমি আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আপনি এই ঘটনা বলবেন। কি হয়েছে একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে।.. (ক্রন্দন).. প্লিজ দর্শক কেউ ভাববেন না আমি প্ল্যান করে এসেছি, আমি কোন ভিউ বাড়ানোর জন্য কান্নাকাটি করছি, প্লিজ কেউ ভাববেন না। আমি একজন এঙ্কর,.. আম.. আহ.. আমার আসলে এই মুহূর্তে ইমোশনাল হওয়ার কথা না।.. আমি মূল অনুষ্ঠানে যাচ্ছি।..(স্বাভাবিক কণ্ঠে) আজ বারবার বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ছে,.. বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকের উপর হত্যা করা হয়, তিনি হুংকার দিয়েছিলেন পাকিস্তানি স্বৈরশাসককে।...(ক্রন্দনরত) আজ বঙ্গবন্ধু থাকলে এই অবস্থা হতো?..।
- আমরা সকল নির্যাতন, গোলাগুলি, হত্যা, রক্ত– এগুলো দেখতে চাই না। এসবের বাইরে থাকতে চাই। অনেক হাইপারটেনশনের রোগী হয়ে গেছি। এগুলো দেখতে আর ভালো লাগে না। আমরা শান্তি চাই, রক্তপাত চাই না...আমি তো অনেককে অনেক কিছুই বলতে পারি। কিন্তু বিষয়টি সিদ্ধ হতে হবে। এগুলো তো প্রমাণিত হওয়ার ব্যাপার। কোনো প্রমাণিত সত্য আমার হাতে না পেলে, এটা বলতে পারি না।
- মোশাররফ করিম, ১ আগস্ট ২০২৪, অভিনেতা [৩৪]
- আমাদের যে ভাইরা, যে বন্ধুরা মারা যাচ্ছে, মারা গেল—যদি আপনি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হন, আপনি রাতের বেলা ঘুমাতে পারবেন না। আমার কানে এখনও বাজে যে ‘কারও পানি লাগবে?’ এটা যতদিন মাথায় থাকবে ততদিন আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারব না।
- সিয়াম আহমেদ, ১ আগস্ট ২০২৪, অভিনেতা [৩৫]
- যেদিন থেকে এই ঘটনাগুলো শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে গুলি চলেছে, সেদিন থেকে আমি দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। কারণ ওই শিশুগুলোর মধ্যে আমার সন্তান থাকতে পারতো। ওই মানুষগুলোর মধ্যে আমি, আপনি থাকতে পারতাম।যে অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন করা হয়েছে বা করা হচ্ছে এখনো, যেভাবে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যেভাবে গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সেই দৃশ্য দেখার পর কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ যদি বাড়িতে বসে থাকতে পারে, তাহলে আমার বলার কিছু নেই। কারণ আমার একটি ১২ বছরের সন্তান আছে। আমি নিজে এ দেশের নাগরিক। আমার বিদেশি কোনো পাসপোর্ট নেই। আমি এই দেশেই থাকবো এবং এই দেশটি আমার। এই দেশটি আমরাই সংস্কার করবো। এটা কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি হতে পারে না। আমি এসব অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক। এর প্রকাশ্য-প্রয়োগ আমরা দেখতে চাই।
- আজমেরী হক বাঁধন, ১ আগস্ট ২০২৪, অভিনেত্রী [৩৬]
- বিটিভি প্রাঙ্গণে এসে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
- শমী কায়সার, ১ আগস্ট, আন্দোলনে ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শনকালে, সাথে ছিলেন ফেরদৌস আহমেদ, রোকেয়া প্রাচী, জ্যোতিকা জ্যোতি, সোহানা সাবা, সুজাতা, রিয়াজ, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, তানভীন সুইটি, হৃদি হক, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, শুভ্র দেব, মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরু, শামীমা তুষ্টিসহ আরও অনেকে। [৩৭]
- শেম অন ইউ গাইজ। (লজ্জা হচ্ছে তোমাদের জন্য)।
- সাদিয়া আয়মান, ১ আগস্ট ২০২৪, ফেরদৌস-শমী কায়সারকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শমী কায়সারের "বিটিভি প্রাঙ্গণে এসে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।" মন্তব্যযুক্ত যমুনা টিভির কার্ড শেয়ার করে [৩৮]
- একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরা বিটিভির প্রাঙ্গণে গিয়ে চোখের পানি ঝরিয়েছেন। অবশ্যই তাদের জীবন ও ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিটিভি কেন্দ্রিক স্মৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের দুঃখ পাওয়াটা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু! এত ছাত্র-ছাত্রী, শিশু, মা, বোন, সাধারণ মানুষ যে মারা গেল তা নিয়ে একবারও কিচ্ছু বললেন না! একবারো দুঃখ প্রকাশ করলেন না। একবারো এই মানুষগুলোর হত্যার বিচার চেয়ে কিছু বললেন না। কেন? কারণ যারা এই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন তারা আপনাদের কেউ না। তাদের বা তাদের পরিবারের দ্বারা আপনাদের কোনো লাভ হবে না, স্বার্থ হাসিল হবে না এবং ক্ষমতাও পাবেন না। তাই কি? নিজেদের লাভ লস চিন্তা করে, ক্ষমতার স্বার্থে কিংবা কাউকে দেখানোর জন্য আপনারা যে কথাগুলো ক্যামেরার সামনে বলেছেন এগুলো সারাজীবন আর্কাইভে তো থাকবেই, আমাদের মনেও থেকে যাবে। জেনারেশন টু জেনারেশন জানবে ৯০ দশকের যাদের অভিনয় টিভি স্ক্রিনে দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি এখন তাদের বাস্তব জীবনের কর্ম দেখে আমরা বিস্মিত এবং লজ্জিত! দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা হয়তো আর কখনো ফিরে আসবে না।
- সাদিয়া আয়মান, ২ আগস্ট ২০২৪, ১ আগস্ট দেওয়া ফেসবুক পোস্ট এর ব্যাখ্যা হিসেবে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে [৩৯]
- আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়কের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারাদেশের সকল সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না। ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
- কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক, ২ আগস্ট ২০২৪ [৪০]
- আমরা এখন রাস্তায়, কারণ আমাদের হাজারো ভাই-বোন মারা গেছেন, হাজারো মানুষকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। যার ফলে এখন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, ছাত্রদের সঙ্গে কর্মজীবী মানুষ, সঙ্গীত ও অভিনয় শিল্পীরাও একাত্মতা পোষণ করেছেন। তারা সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে, আন্দোলন করছে এবং একজন নাগরিক হিসেবে ও সাধারণ মানুষ হিসেবে তার অধিকার সম্পর্কে দাবি তুলছে। বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী ছাত্রদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে এই আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আমাদের একজন সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মিথ্যা মামলায় তুলে নেওয়া হয়েছে। ছাত্ররা রাস্তায় নামলেই তারা গণহারে গ্রেফতার করছে। রংপুরে আন্দোলন করার সময় অসংখ্য ছাত্রছাত্রীদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা দিনদিন আরও কঠোর হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধের মধ্যে আছি আমরা। বাস্তবে আমাদের এখানে কোনো যুদ্ধ চলছে না, তাহলে আমার প্রশ্ন যুদ্ধ আসলে কেমন হয়। সরকার এটির সমাধান করতে পারত রক্ত ঝরার আগেই। আমাদের ভাই ও বোনদের গুলি খেয়ে রক্ত ঝরার আগেই সমাধান করা উচিত ছিল তাদের। এটা এখন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার হাজারের বেশি মানুষকে মেরেছে,হাজারের বেশি মানুষকে তুলে নিয়েছে। সব মিলিয়ে নয় হাজারের বেশি মানুষকে তুলে নিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জেলে পাঠানো হয়েছে। কাজেই অবশ্যই আমরা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ও আন্দোলন কারিদের পক্ষ থেকে করজোড়ে প্রত্যেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে সাহায্য চায়। তারা যেন সরকারকে প্রশ্ন করে, চাপ দেয়।’ আমাদের আন্দোলন এখন আর কোটায় সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের হাজারো ভাই-বোন মারা গেছে। আমরা সেই নিহতের প্রকৃত সংখ্যাটি পর্যন্ত জানি না। সরকার বলছে তারা নিহতের সংখ্যা জানাবে। গণমাধ্যমে আমরা দেখছি আড়াইশর বেশি নিহতের কথা। বাংলাদেশি পুলিশ ও সরকারের বর্বরতা থেকে নিষ্পাপ শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। ২ বছর ৪, ৬ ও ১১ বছরের শিশুরা পর্যন্ত মারা গেছে। এমনকি শিশুদের পর্যন্ত আদালতে দাঁড় করিয়েছে তারা। কাজেই এই আন্দোলন এখন আর কোটায় সীমাবদ্ধ নেই। এই আন্দোলন এখন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলন। এই আন্দোলন এখন আমাদের মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকারের আন্দোলন। শুরুতে এটা ছাত্রদের আন্দোলন হলেও এখন এটা গণমানুষের আন্দোলন। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমাতে সরকার অনেকেই গ্রেফতার করেছে। আমাদের অনেক নেতাকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা এখন বিশ্বাস করি আমরা এখন সবাই নেতা। আমার এখন সবাই সমন্বয়ক। আর আমরা এই লড়াই চালিয়ে যাব স্বৈরাচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। এক নায়কতন্ত্র বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং আমাদের সব দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত।
- প্রাপ্তি তাপসী, কোটা আন্দোলনের পক্ষে অন্যতম সংবাদ প্রতিনিধি ছাত্রী, ২ আগস্ট ২০২৪ আল-জাজিরার দ্য স্ট্রিম অনুষ্ঠানে দেওয়া দীর্ঘ অনলাইন সাক্ষাৎকারে [৪১]
- বাংলাদেশের আমার সব ভক্তকে বলছি, আমি তোমাদের কথা শুনছি, তোমাদের জন্য প্রার্থনা করছি।
- এনজো ফার্নান্দেজ, ৩ আগস্ট ২০২৪, ২০২২ সালের কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন জাতীয় ফুটবল দলের মিডফিল্ডার, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে লাল কাপড়ে চোখ ঢাকা পেছনে বাংলাদেশের পতাকাসহ প্রতীকি ছবি শেয়ার করা ফেসবুকের এক পোস্টের ক্যাপশনে [৪২]
- ইয়া আল্লাহ, তুমি যুদ্ধে আমার নবীকে যেভাবে সাহায্য করেছ! সেভাবে আমাদের ভাইগুলোকে সাহায্য করো আমিন।
- ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী, ৩ জুলাই, ২০২৪, অভিনেত্রী [৪৩]
- তাদের সাথে আলোচনার কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, তাদের কোন বক্তব্য থাকলে দেশবাসীর সামনেই মিডিয়া মারফত তা রাখতে পারেন। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। গুলি আর সন্ত্রাসের সাথে কোন সংলাপ হয় না।
- আসিফ মাহমুদ, ৩ আগস্ট ২০২৪, কোটা আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক, বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে [৪৪]
- চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী চলা অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে অনেক ইমাম-খতীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোনো কোনো খতীবকে কারণ ছাড়াই ছুটিতে রাখা হয়েছে। যারা এগুলো করেছেন, ঘোরতর অন্যায় ও নীতিবহির্ভূত কাজ করেছেন। এদেশে সবচেয়ে কম সুযোগ সুবিধায় দায়িত্ব পালন করেন ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পান খুবই কম। অথচ তাদের ওপর খবরদারি করা হয় সব থেকে বেশি। ইমাম মানে নেতা। তাদের ওপর খবরদারি করা মুসলিমসুলভ আচরণ হতে পারে না। কোনো ইমাম সত্য উচ্চারণ করতে গিয়ে জুলুমের শিকার হলে সবাইকে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান করছি। ইমাম-খতীবগণ যত স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবেন, আমাদের সমাজ ততই ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে এগোবে।
- আহমদুল্লাহ, ৩ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশী আলিম (মুসলিম ইসলামী পণ্ডিত), ঈমাম, খতীব, ইসলাম ধর্ম প্রচারক ও বক্তা, নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্টে কোটা আন্দোলনের পক্ষে কথা বলায় দেশব্যাপী ঈমাম খতীবদের চাকরিচ্যুত করা প্রসঙ্গে [৪৫]
- আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি। তারা যেকোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।
- শেখ হাসিনা, ৩ আগস্ট, গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে [৪৬]
- কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। গুলির যে তথ্য পাওয়া গেছে তার অনেকগুলোই পুলিশের রাইফেলের গুলি নয়। কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি। হয়তো দুই-একজন কিশোর মারা গিয়ে থাকতে পারে। তাদেরককে ঢাল হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছিল। শিশুদের আড়ালে অন্য একটি শক্তি ছিল। পেছনের শক্তিকে রুখতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। (পদত্যাগের প্রশ্নে) এরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে এবং প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করা তাহলে আমরা সেটা করব।
- আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ৩ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী [৪৭]
- কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা দেশবাসী দেখেছেন। সরকার গুণ্ডা-পাণ্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালালো এবং পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি নামিয়ে, আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগণিত শিশুকিশোর ও তরুণের তাজা প্রাণ হরণ করল, তা দেশবাসী কি এত সহজে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যাবে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।’ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সারাদেশের শিশু কিশোর ও তরুণরা শত উসকানি, হামলা ও নির্যাতনের মধ্যেও ধৈর্য ধরে শৃঙ্খলার সঙ্গে আস্তে আস্তে আইন মেনে সামনে পা বাড়াচ্ছিল। বিপরীতে দ্বিতীয় পক্ষ যে উপর্যুপুরি উসকানি দিল, গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালালো এবং পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি নামিয়ে, আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগণিত শিশু কিশোর ও তরুণের তাজা প্রাণ হরণ করল, তা দেশবাসী কি এত সহজে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যাবে।’ দ্রুত বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী তিন দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে যে সম্মান মর্যাদা ও গৌরব অর্জন করেছে তা আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ মান রক্ষা করেই আপনাদের সকলকে নিজ দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। চোখের সামনে আমরা নিজেদের মাতৃভূমিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। আক্রমণকারীরা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিরোধের মধ্যে পিছপা হতে বাধ্য হলে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে। তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কখনও সম্মুখভাবে, কখনো পেছনে ও পাশে দাঁড় করিয়ে অন্যান্য বাহিনীগুলো এই গণ-আন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের স্বশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, তাদের মুখে বন্দুক তাক করেনি।
- ইকবাল করিম ভূঁইয়া, ৪ আগস্ট ২০২৪, সাবেক সেনাপ্রধান, সংবাদ সম্মেলনে [৪৮]
- রিট করার নেপথ্যে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। কেননা তারা দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিতে চায়।
- আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, ৪ আগস্ট ২০২৪, অ্যার্টনি জেনারেল, আন্দোলনের সময় সরাসরি গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করার প্রসঙ্গে [৪৯]
- শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি সে সুযোগ পাননি।
- বার্তা সংস্থা এএফপি, ৫ আগস্ট ২০২৪, [৫০]
- আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি। আপনারা আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে আমরা পূরণ করবো। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবো। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করেন। দয়া করে ভাঙচুর, মারামারি, হত্যা, সংঘর্ষ এগুলো থেকে বিরত হন।”
- ওয়াকার-উজ-জামান, ৫ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল, দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে [৫১]
- দেশে আজকে যা ঘটল, এটাই হওয়ার কথা ছিল। গণ-অভ্যুত্থান কখনো ঠেকানো যায় না। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সহজেই সমাধান করা যেত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেদের কারণে এত মানুষ মারা গেল। গণমাধ্যমে প্রাণহানির যে চিত্র উঠে এসেছে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আরও কত মরদেহ কোথায় পড়ে আছে, কত গণকবর হয়েছে, কতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরেছে! তিনি তো চলে গেলেন। এখন এর জবাব দেবে কে? ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেননি। দিনের পর দিন ভোট চুরি করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। শেখ হাসিনার বোঝা উচিত ছিল, তিনি ও তাঁর দল কতটা অজনপ্রিয়। এই যে এত প্রাণহানি, এর জবাব দেবে কে? দেশে সুশাসনের মারাত্মক অভাব। তিনি সুশাসন দিতে পারেননি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ওপর হাজার হাজার গুলি ছোড়া হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। এর আগে আমরা সবাই এইচ এম এরশাদকে স্বৈরাচার বলেছি। তখন মাত্র ছয়জন মানুষ মারা যাওয়ায় তাঁকে স্বৈরশাসক বলছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে কত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা মারা গেছেন। এখন এর জবাব দেবে কে? যাঁকে জাতির পিতা বলা হয়, তাঁর পরিবারের সদস্যদের এত করুণ পরিণতি কেন হবে? তাঁর এমন পরিণতি আমাদের দেখতে হলো। এসব হয়েছে, তাঁর দম্ভ ও অহমিকার কারণে। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, দেশে সুশাসন নিশ্চিত করেন। বিভিন্ন সভা–সেমিনারে বলেছি। যা হচ্ছে, তা স্বৈরতন্ত্র। এসব বলার কারণে আমাদের ভিন্ন দলের এজেন্ট বলা হতো। এই যে গণভবন লুটপাট হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে—এ জন্য জনগণকে দোষ দেবেন কীভাবে? শ্রীলঙ্কা থেকে হাসিনার সরকার শিক্ষা নেয়নি। তিউনিসিয়া থেকে শিক্ষা নেয়নি। মিসরে কীভাবে হোসনে মোবারক জনরোষে উড়ে গেছে, সেখান থেকে সরকার শিক্ষা নেয়নি। জনগণের সরকার না হলে এমন পরিণতি হয়। এরশাদের চেয়ে শেখ হাসিনা ১০০ গুণ বেশি খারাপ হয়ে বিদায় নিয়েছেন। এরশাদ পালিয়ে যাননি। তিনি পালিয়ে গেছেন। তিনি পালিয়ে গেছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ দলটাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেলেন। তাঁর হিংসা, দম্ভ, অহংকার দলটাকে ধ্বংস করল।
- এম সাখাওয়াত হোসেন, ৫ আগস্ট ২০২৪, নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা [৫২]
- ভারত হল তার আশেপাশের সকল মুসলিম রাষ্ট্রের আসল মাতৃভূমি। আমরা গর্বিত এবং সম্মানিত যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে সুরক্ষিতবোধ করেন। কিন্তু যারা ভারতে থাকে তারা বারেবারে প্রশ্ন করে কেন হিন্দু রাষ্ট্র? কেন রাম রাজ্য? কেন সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে!!’ ‘মুসলিম দেশে তো মুসলমানরাও সুরক্ষিত নয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, ব্রিটেনে যা ঘটছে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সৌভাগ্যবান যে রাম রাজ্যে থাকি। জয় শ্রী রাম'।
- কঙ্গনা রানাউত, ৫ আগস্ট ২০২৪, অভিনেত্রী, এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে [৫৩]
- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দিতে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই রূপরেখা ঘোষণা করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। তার সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তিনি দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন। আমরা সকালের মধ্যে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চাই। রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ থাকবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও আমরা সকালের মধ্যে ঘোষণা করব।
- নাহিদ ইসলাম, ৬ আগস্ট ২০২৪, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, ভোর ৪টার পর ফেসবুকে দেয়া ভিডিও বার্তায় [৫৪]
- মূলত দুইটি কারণে ভারত শেখ হাসিনাকে রাখতে চায় না। প্রথম বিষয়টি অবশ্যই তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, ভারত তার সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। আর বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। ভারত চায় না, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার ঘটনা ছায়াপাত করুক। এর আগে সেনা সরকার যখন ছিল, তখন ভারতের অসুবিধা ছিল। কিন্তু এবার সেনা সম্ভবত পিছনে থাকবে, বাংলাদেশে নতুন কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হবে বলে মনে হচ্ছে। ফলে তাদের সঙ্গে ভারতের আলোচনা করতে কোনো অসুবিধা হবে না। বাংলাদেশের ঘটনা ভারতকে একটা বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ভারত চায় না, বাংলাদেশের ঘটনার অভিঘাত দেশের মধ্যে পড়ুক। বাংলাদেশে ভারতের যে সম্পদ ও বিনিয়োগ আছে, ভারত সেগুলিকে নিরাপদ রাখতে চায়। সেদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা চায়।
- শ্রীরাধা দত্ত, ৬ আগস্ট ২০২৪, ও পি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ডয়চে ভেলেকে [৫৫]
- কুখ্যাত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে অবিলম্বে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গ্রেপ্তার করতে হবে। বাংলাদেশে গুম-খুনের আসল কারিগর সে শুধু তা না, ফোন ট্যাপিংয়ের নামে মানুষের প্রাইভেসি ধ্বংস করেছে সে। এবং প্রাউডলি সেই সব রেকর্ডিং এই পারভার্ট লোকটা মিডিয়াতে সরবরাহ করত এবং আমাদের স্পাইনলেস মিডিয়া সেগুলো প্রচার করত। এই লোককে এখনই নিউট্রালাইজ করতে হবে। এছাড়া ডিবি’র হারুনসহ কুখ্যাত যারা আছে তাদের সরিয়ে দিয়ে পুলিশ বাহিনীর উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করতে হবে এখনই।’
- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ৬ আগস্ট ২০২৪, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা, ফেসবুক পোস্টে [৫৬]
- গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।