আশাপূর্ণা দেবী
ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক
আশাপূর্ণা দেবী (৮ জানুয়ারি ১৯০৯– ১২ জুলাই ১৯৯৫) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং শিশুসাহিত্যিক। তাঁর রচিত প্রথম প্রতিশ্রুতি- সুবর্ণলতা -বকুলকথা উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তার রচনার মূল উপজীব্য। তিনি প্রায় দেড় হাজার ছোটোগল্প ও আড়াইশো-র বেশি উপন্যাসের রচয়িতা। ছোটদের জন্য ত্রিশটি বই লিখেছেন। দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছর তিনি সাহিত্য সাধনায় মগ্ন ছিলেন। প্রথম প্রতিশ্রুতি উপন্যাসের জন্য তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার ও সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারেও পান।
উক্তি
সম্পাদনা- যাকে সামনে সমীহ করতে বাধ্য হতে হয়, তাকে আড়ালে নিন্দে করতে না পেলে বাঁচবে কেমন করে মানুষ!
- প্রথম প্রতিশ্রুতি- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলিকাতা, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯৬৫, পৃষ্ঠা ৩৯
- বোধহয় জগতের সব শক্ত কাজের সেরা শক্ত হচ্ছে মানুষ চেনা! একটা মানুষকে দিনের পর দিন দীর্ঘদিন ধরে দেখেও জানতে পারা যায় না কী রয়েছে তার মনের গভীরে।
- একটি মৃত্যু এবং আর একটি (ছোটগল্প), আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প সঙ্কলন, চতুর্থ মুদ্রণ : ২০০২, প্রকাশক- ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, নয়াদিল্লি পৃষ্ঠা ১৩
- মনে-জ্ঞানে যে কাজে দোষ দেখব না, পাপ দেখব না, সে কাজে নিন্দের ভয় করব কেন? নিন্দে সুখ্যাতির ভয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকাটাও তো এক রকম স্বার্থপরতা।
- প্রথম প্রতিশ্রুতি- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলিকাতা, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯৬৫, পৃষ্ঠা ৩৬৩
- কতো অসম্মানের ইতিহাস, কতো অমর্যাদার গ্লানি বহন করে আশ্রয়টা বজায় রেখেছি। এখনো রাখছি--এখনো স্থিরবিশ্বাস রাজেন্দ্রলাল স্ট্রীটের ওই ইঁটের খাঁচাখানার মধ্যেই বুঝি আমার মর্যাদা, আমার সম্মান। ওর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এলেই লোকে আমার দিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে তাকাবে। ওই খাঁচাটার শিকগুলোয় মরচে পড়ে গেছে, তবু তাই আঁকড়েই বসে আছি।
- বকুল-কথা- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ, চৈত্র ১৩৬০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২০৭
- নিতান্ত সরল অবোধ বিশ্বস্ত কোনো হৃদয় একবার যদি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, সেটা বড় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
- আহাম্মুক (ছোটগল্প), আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প সঙ্কলন, চতুর্থ মুদ্রণ : ২০০২, প্রকাশক- ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, নয়াদিল্লি পৃষ্ঠা ৫৭
- কিছুতেই নিজেকে ‘হিন্দুনারীর’ খোলসে ঢুকিয়ে ফেলতে পারছি না, অথচ খোলসটা বয়েও মরছি। হয়তো মরণকাল অবধিই বয়ে মরবো।
- বকুল-কথা- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ, চৈত্র ১৩৬০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৪৭
- সহজ সুস্থ মানুষও রাতে ঘুমুতে যাবার আগে স্থির বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারে না সকালের আলো সে দেখবেই! বলতে পারে না, তার ভরা বসন্তের মাঝখানে বজ্রের অভিশাপ নেমে আসবে না, শরতের সোনালী আলোকে মুছে দিয়ে শুরু হয়ে যাবে না অপ্রতিরোধ্য ধারা-বর্ষণ!
- প্রথম প্রতিশ্রুতি- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলিকাতা, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯৬৫, পৃষ্ঠা ২৮৮
- এই প্রজন্ম বুদ্ধিমত্তায় আর বিদ্যাবস্তায়--অনেক ক্ষমতা আয়ত্ত করে ফেলেছে। তবে তার মাশুল জোগাতে একটা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ভালবাসবার ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা দিনের দিন 'দেউলে'র খাতায় নাম লিখছে। তাই তাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে ক্ষুদ্রতা তিক্ততা নীচতা আর বিদ্বেষ!
- বড়রাস্তা হারিয়ে (ছোটগল্প), আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প সঙ্কলন, চতুর্থ মুদ্রণ : ২০০২, প্রকাশক- ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, নয়াদিল্লি পৃষ্ঠা ৭৯-৮০
- সকলের সঙ্গে মিলেমিশে সবাইকে ভালবেসে পৃথিবীতে থাকতে হয়।
- প্রথম প্রতিশ্রুতি- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলিকাতা, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯৬৫, পৃষ্ঠা ৯০
- এ যুগ কি ব্যাক্তি-স্বাধীনতা আর মেয়েদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে এদেশেও সেই একটা হতভাগ্য জাতি সৃষ্টি করলো, পৃথিবীর সমস্ত সভ্য জাতিরা যা নিয়ে দুশ্চি ন্তয় তৃগছে! যে হতভাগ্যেরা শিশুকালে বাল্যকালে তাদের জীবনের পরম আশ্রয় হারিয়ে বসে ক্ষমাহীন নিষ্ঠ্রতায় কঠিন হয়ে উঠবে, উচ্ছৃঙ্খল হবে, স্বেচ্ছাচারী হবে, সমাজদ্রোহী হবে, অথবা একটা হীনম্মন্যতায় ভুগে ভূগে জীবনের আনন্দ হারাবে, উৎসাহ হারাবে, বিশ্বাস হারাবে।
- বকুল-কথা- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ, চৈত্র ১৩৬০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২৩৮
- নিষ্প্রভ দুই চোখ মেলিয়া তেমনি নির্ব্বোধের মতো চাহিয়া থাকেন দ্রবময়ী--বয়েস? হ্যাঁ হ'ল বৈকি বাবা, অনেক হ'ল।...বাঁচতে আর সাধ নেই...কিন্তু মরতে যে বড়ো ভয় করে বাবা...বড়ো ভয় করে...দেখে শুনে একটু ভালো ওষুধ আমায় দাও না ভূষণ!
- ভয় (ছোটগল্প), আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প সঙ্কলন, চতুর্থ মুদ্রণ : ২০০২, প্রকাশক- ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, নয়াদিল্লি পৃষ্ঠা ১৫৮
- সমাজের আপাদমস্তক তাকিয়ে দেখো, সাহিত্যিকই আজ সকলের হাতিয়া। আর তাদের হাতে রাখতে কতো রকমের জালবিস্তার। টাকার টোপ, সম্মানের টোপ পুরস্কারের টোপ, ক্ষমতার টোপ ছড়িয়ে রাখা আজ সমাজ-সরোবরের ঘাটে ঘাটে।
- বকুল-কথা- আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ, চৈত্র ১৩৬০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১৭২
- যুগের চাকার গতিও কখনো উদ্দাম,কখনো মন্থর। সেই মন্থরতার মুক্তিও মানুষের হাতে। জনগনেশের জাগরণে যুগের জাগরণ।
- প্রথম প্রতিশ্রুতি-আশাপূর্ণা দেবী, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান-কলিকাতা, সাতাত্তরতম মুদ্রণ, প্রথম প্রকাশ- ফাল্গুন ১৩৭১, পৃষ্ঠা ৪২৮
আশাপূর্ণা দেবী সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- আশাপূর্ণার ছোটগল্পের চরিত্রগুলি মূলত সমাজনির্ভর প্রাণী, সমাজই তাদের কাছে শেষ সত্য। বুকের মধ্যে যাই ঘটুক, আশাপূর্ণার গল্পে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখতে পাই ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সমাজের চাপের কাছে নিজেকে বলি দিচ্ছে। গল্প সাজানোর গুণে কখনো তা হয়ে উঠছে মহানুভবতা, কখনো বা হৃদয়ের দৈন্য, কখনো কঠোর আত্মসংযমের পরীক্ষা। তলিয়ে ভেবে দেখলে দেখবো ছোটগল্পগুলিতে শেষ জিৎ কিন্তু ব্যক্তির নয় সমাজেরই। প্রত্যেক বার। সে ব্ক্তি গল্পে হারুক, আর জিতৃক, প্রকৃত জয়ী সমাজ। যা ঘটে থাকে বাস্তবে।
- নবনীতা দেব সেন, আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প সঙ্কলন বইয়ের ভূমিকায়, আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প সঙ্কলন, চতুর্থ মুদ্রণ ২০০২, প্রকাশক- ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, নয়াদিল্লি
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় আশাপূর্ণা দেবী সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।