কাজী নজরুল ইসলাম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি
(কাজি নজরুল ইসলাম থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) রাঢ় বাংলায় জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি কবি এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

মহা - বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ, রণ-ভূমে রণিবে না ~ নজরুল
  • 'বার্ধক্য তাহাই যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে ,মৃত্যুকে আকড়াইয়া পড়িয়া থাকে'
    • 'যৌবনের গান '
  • মিথ্যা শুনিনি ভাই,
    এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।
    • ‘সাম্যবাদী’ কবিতা, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮০
  • পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল!– মূর্খরা সব শোনো,
    মানুষ এনেছে গ্রন্থ;– গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো!
    • ‘মানুষ’ কবিতা, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮২
  • বল বীর—
    বল উন্নত মম শির!
    শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
    • ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, অগ্নি-বীণা - নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
  • বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।
  • কারার ঐ লৌহ-কবাট
    ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট
    রক্ত-জমাট
    শিকল পূজোর পাষাণ-বেদী!
    • ভাঙ্গার গান কাব্যগ্রন্থ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৫৯
  • ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
    আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
    • ‘সর্বহারা’ কাব্যের ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১২৩
  • আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বি-নয়নে বহ্নি,
    আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম, আমি ধন্যি!
    • ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, অগ্নি-বীণা - নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮
  • নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই যদি দেশ উদ্ধার হয়ে যেত,তাহলে এই দেশ এতদিন পরাধীন থাকত না।
    • আমার পথ প্রবন্ধ, রুদ্র-মঙ্গল, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪২১
  • ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়।
    • আমার পথ প্রবন্ধ, রুদ্র-মঙ্গল, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪২২
  • আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।
    • আমার পথ প্রবন্ধ, রুদ্র-মঙ্গল, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪২১
  • যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।
    • আমার পথ প্রবন্ধ, রুদ্র-মঙ্গল, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪২২
  • আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন
    • ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, অগ্নি-বীণা - নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১
  • আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস্,
    আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
    • ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, অগ্নি-বীণা - নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭
  • মহা– বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
    আমি সেই দিন হব শান্ত,
    যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
    অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না,
    বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
    আমি সেই দিন হব শান্ত!
    • ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, অগ্নি-বীণা - নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০–১১
  • কত মোহররম এলো, গেল চলে বহু কাল—
    ভুলি নি গো আজো সেই শহীদের লোহু লাল!
    মুস্‌লিম! তোরা আজ ‘জয়নাল আবেদীন,’
    ‘ওয়া হোসেনা—ওয়া হোসেন।’ কেঁদে তাই যাবে দিন।
    ফিরে এল আজ সেই মহরম মাহিনা
    ত্যাগ চাই মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না!
    • ‘মোহররম’ কবিতা, অগ্নি-বীণা - নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৭–৫৮
  • আমার যাবার সময় হল
    দাও বিদায়।
    মোছ আঁখি দুয়ার খোলো
    দাও বিদায়।
    • নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, সপ্তম খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৫৬
  • যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে!
    অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে—
    বুঝবে সেদিন বুঝবে।
    • ‘অভিশাপ’ কবিতা, দোলন-চাঁপা কাব্যগ্রন্থ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮৫
  • তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?
    চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী, বলে না তো কিছু চাঁদ।৷
    • বুলবুল কাব্যগ্রন্থ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, ষষ্ঠ খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৭৩
  • হয়তো তোমার পাব দেখা,
    যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।৷
    • ‘আশা’ কবিতা, ‘ছায়ানট’ কাব্যগ্রন্থ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩৪
  • হেথা সবে সম পাপী
    আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি!
    • ‘পাপ’ কবিতা, ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮৪
  • ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা না পেলে তার জীবন দুঃখের ও জড়তার।
  • ভালোবাসাকে যে জীবনে অপমান করে সে জীবনে আর ভালোবাসা পায় না।
  • তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।
  • মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন,
    কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভোগীই অনুভব করতে পারে।
  • একটা ধর্ম কখনো সঙ্কীর্ণ, অনুদার হইতে পারে না। ধর্ম সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং সত্য চিরদিনই বিশ্বের সকলের কাছে সমান সত্য। কোন ধর্ম শুধু কোন এক বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য নয়। তাহা বিশ্বের।
    • ‘ছুঁৎমার্গ’ প্রবন্ধ

কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে উক্তি

সম্পাদনা
  • কবি নজরুল যে-স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা শুধু তার নিজের স্বপ্ন নয় —সমগ্র বাঙালী জাতির স্বপ্ন।
    • সুভাষচন্দ্র বসু, নজরুল স্মৃতি- বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত, প্রকাশক- সাহিত্যম্, কলিকাতা, পৃষ্ঠা ২
  • কবিরা সাধারণত কোমল ও ভীরু, কিন্তু নজরুল তা নন। কারাগারে শৃঙ্খল পরে বুকের রক্ত দিয়ে তিনি যা লিখেছেন, তা বাঙালীর প্রাণে এক নৃতন স্পন্দন জাগিয়ে তুলেছে।
  • ভুল হয়ে গেছে বিলকুল
    আর সব কিছু ভাগ হয়ে গেছে
    ভাগ হয়নিকো নজরুল।
    • অন্নদাশঙ্কর রায়
  • জীবনানন্দ দাশ বলতেন নজরুল ইসলামের আত্মপ্রত্যয় ছিল। পরিকীর্তিত সৎ প্রেরণাই মানুষের ও শেষ বিশ্লেষণে মানুষ সমাজের মর্মকথা এই ঘোষণায় তার অপূর্ব বিশ্বাস ছিল। মনুষ্যজীবনের পরিবর্তিত অমূল্য জিনিসগুলোর উত্তরোত্তর মূল্যনাশের ব্যথা তাঁকে সন্তপ্ত করেছিল। .. তাঁর জনপ্রেম, দেশপ্রেম পূর্বোক্ত শতাব্দীর বৃহৎ ধারার সঙ্গে সত্যিই একাত্ম। পরবর্তী কবিরা এ সৌভাগ্য থেকে অনেকটা বঞ্চিত বলে আজ পর্যন্ত নজরুলকেই সত্যিকারের দেশ ও দেশীয়দের বন্ধু কবি বলে জনসাধারণ চিনে নিবে। ” “জন ও জনতার বন্ধু ও দেশপ্রেমিক কবি নজরুল। ”

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
 
উইকিসংকলন
উইকিসংকলনে এই লেখক রচিত অথবা লেখক সম্পর্কিত রচনা রয়েছে: