আবুল কাশেম ফজলুল হক

পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ

আবুল কাশেম ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২) বাঙালি আইনজীবী, লেখক এবং সংসদ সদস্য ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে তিনি বাঙালি কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের নিকট শেরে বাংলা এবং হক সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক অনেক পদে অধিষ্ঠান করেছেন, তার মধ্যে কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬-১৯৫৮) অন্যতম। যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

আবুল কাশেম ফজলুল হক
  • আমি জীবনের প্রান্তসীমায় উপনীত। আমার আর কোনও আকাঙ্ক্ষা নেই।আমি যদি দুই বাংলার মধ্যাকার এই মিথ্যার প্রাচীর অপসারিত করবার কাজ শুরু করতে পারি, তা হলেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।
    • ১৯৫৪ সালে কলকাতায় শান্তি সেনার পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি সভায় হক সাহেব আবেগজড়িত কণ্ঠে এটি বলেন।[২]
  • যারা আমাদের এই সোনার দেশকে দুভাগ করেছে - তারা দেশের দুশমন।
    • ১৯৫৪ সালে কলকাতায় আবুল কাশেম ফজলুল হক।[৩]
  • নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে জাতির সহায়তায়। মহত্ত্ব নিয়ে অনাসক্ত হয়ে ব্যক্তিসত্তার স্বকীয়তা ভূলতে হবে; লুপ্ত করতে হবে। জাতির স্বার্থই হবে ব্যক্তির স্বার্থ। জাতির কল্যাণেই হবে ব্যক্তির কল্যাণ।
  • যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কিভাবে শিখবে?
  • যারা পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে তার সন্তানকে ডোবায় নামতে দেন না, কিভাবে সে সন্তান আটলান্টিক পাড়ি দিবে?
  • লাঙ্গল যার জমি তার
  • আপনি যদি কোন ভালো কাজ করেন তাহলে লোকে আপনার সমালোচনা করবে।
  • আম গাছে আম ধরে বলেই লোকে ঢিল মারে। ফজলি আম গাছে আরও বেশি করে মারে; শেওড়া গাছে কেউ ঢিল মারে না।

ফজলুল হক সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • ভাবতে অবাক লাগে, তখনই (১৯৪৩-৪৪) ফজলুল হক মুক্ত বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার কল্পিত বাংলাদেশে প্রকৃত ক্ষমতা বাঙালীদের হাতে থাকবে এবং বাঙালীদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের দেশ শাসন করবেন; বিদেশীদের দ্বারা মনোনীত মন্ত্রীরা নন।
    • "পাকিস্তান প্রস্তাব ও ফজলুল হক" - অমলেন্দু দে। পৃষ্ঠা ১৭৫। রত্না প্রকাশন, ১৪/১ পিয়ারী মোহন রায় রোড, কোলকাতা-২৭। প্রথম প্রকাশ মে ১৯৭২/ "আমরা বাংলাদেশী না বাঙালি" - আবদুল গাফফার চৌধুরী । পৃষ্ঠা - ৪৪
  • ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি বাঙালি। সেই সঙ্গে ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি মুসলমান। খাঁটি বাঙালি আর খাঁটি মুসলমানের এমন অপূর্ব সমন্বয় আমি আর দেখি নাই। ফজলুল হক আমার ছাত্র বলে ঐ কথা বলছি না। সত্য বলেই এ কথা বলছি। খাঁটি বাঙালিত্ব আর খাঁটি মুসলমানত্বের সমন্বয়ই ভবিষ্যৎ বাঙালির জাতীয়তা। ফজলুল হক ঐ সমন্বয়ের প্রতীক। ঐ প্রতীক তোমরা ভেঙো না। ফজলুল হকের অমর্যাদা তোমরা করো না। আমি বলছি, বাঙালি যদি ফজলুল হকের মর্যাদা না দেয়, তবে বাঙালির বরাতে দুঃখ আছে।
  • এ বছরের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের নির্বাচনে ফজলুল হকের বিরাট জয়ের সংবাদে খণ্ডিত ভারতেও অনেকখানি আশা-উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছিল। প্রাচীন বিশ্বাসযোগ্য এই মানুষটি আর যাই হোক সাম্প্রদায়িকতায় উস্কানি দেবেন না। ফজলুল হক মুসলিম লিগের সংস্পর্শে থাকতে, চাননি, বরং মুসলিম লিগকে বাদ দিয়ে কংগ্রেসের সহায়তায় সংযুক্ত বাংলায় মন্ত্রিসভা গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তখন দিল্লির সিংহাসন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে, বাংলা নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় নেই। ফজলুল হককে সমর্থন না জানিয়ে তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হল। বিস্ময় বিমূঢ় ফজলুল হক আইরিস নেতা পারনেলের মতন আহত কণ্ঠে বলে উঠেছিলেন, ইউ হ্যাভ থ্রোন মি টু দ্য উত্স! তারই ফলাফল, ছেচল্লিশ সালে। কলকাতার পথে পথে রক্তস্রোত।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা