রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালি সাহিত্যিক
(রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে পুনর্নির্দেশিত)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরুবিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৯১৫ সালে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • শিক্ষার জন্য আমরা আব্দার করিয়াছি, গরজ করি নাই। শিক্ষাবিস্তারে আমাদের গা নাই। তার মানে, শিক্ষার ভোজে নিজেরা বসিয়া যাইব, পাতের প্রসাদটুকু পর্যন্ত আর-কোনো ক্ষুধিত পায় বা না পায় সে দিকে খেয়ালই নাই।
  • বিদ্যাবিস্তারের কথাটাকে যখন ঠিকমত মন দিয়া দেখি তখন তার সর্বপ্রধান বাধাটা এই দেখিতে পাই যে তার বাহনটা ইংরেজি। বিদেশী মাল জাহাজে করিয়া শহরের ঘাট পর্যন্ত আসিয়া পৌঁছিতে পারে, কিন্তু সেই জাহাজটাতে করিয়াই দেশের হাটে হাটে আমদানি রফ্‌তানি করাইবার দুরাশা মিথ্যা। যদি বিলিতি জাহাজটাকেই কায়মনে আঁকড়াইয়া ধরিতে চাই তবে ব্যাবসা শহরেই আটকা পড়িয়া থাকিবে।
  • "আপনার জীবন পাতার ডগায় শিশিরের মতো সময়ের প্রান্তে হালকাভাবে নাচতে দিন।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "প্রজাপতি মাস নয়, মুহূর্ত গণনা করে, এবং যথেষ্ট সময় আছে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "বিশ্বাস হল সেই পাখি যে ভোরের অন্ধকারে আলো অনুভব করে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি না, বরং তাদের মোকাবেলায় নির্ভীক হতে চাই। আমার বেদনাকে স্তব্ধ করার জন্য আমি ভিক্ষা করি না, কিন্তু হৃদয়কে জয় করতে চাই।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "গীতাঞ্জলি" (1910)।
  • "আমরা পৃথিবীতে বাস করি যখন আমরা এটি ভালবাসি।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "একটি শিশুকে আপনার নিজের শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ করবেন না, কারণ সে অন্য সময়ে জন্মগ্রহণ করেছে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "বন্ধুত্বের গভীরতা পরিচয়ের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে না।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "প্রত্যেক শিশু এই বার্তা নিয়ে আসে যে ঈশ্বর এখনও মানুষের প্রতি নিরুৎসাহিত হননি।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "আমি ঘুমিয়েছিলাম এবং স্বপ্ন দেখেছিলাম যে জীবন আনন্দ। আমি জেগে উঠে দেখলাম যে জীবনই সেবা। আমি অভিনয় করেছি এবং দেখছি, সেবাই আনন্দ।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "স্ট্রে বার্ডস" (1916)।
  • "ভালোবাসা একটি নিছক প্ররোচনা নয়, এতে অবশ্যই সত্য থাকতে হবে, যা আইন।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "সাধনা: জীবনের উপলব্ধি" (1913)।
  • "সর্বোচ্চ শিক্ষা হল সেই শিক্ষা যা আমাদের কেবল তথ্যই দেয় না বরং আমাদের জীবনকে সমস্ত অস্তিত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "সাধনা: জীবনের উপলব্ধি" (1913)।
  • "আমি একজন আশাবাদীর নিজস্ব সংস্করণে পরিণত হয়েছি। যদি আমি এটি একটি দরজা দিয়ে না করতে পারি, আমি অন্য দরজা দিয়ে যাবো - অথবা আমি একটি দরজা তৈরি করব। বর্তমান যতই অন্ধকার হোক না কেন ভয়ঙ্কর কিছু আসবে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "আসুন আমরা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি না বরং তাদের মুখোমুখি হওয়ার সময় নির্ভীক হতে চাই।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "সত্য বিজয়ী হয়ে আসে কারণ আমরা তাকে অতিথি হিসাবে গ্রহণ করার শিল্প হারিয়ে ফেলেছি।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "যে ফুল একক, তার অসংখ্য কাঁটাকে হিংসা করার দরকার নেই।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "আপনি কেবল দাঁড়িয়ে এবং জলের দিকে তাকিয়ে সমুদ্র অতিক্রম করতে পারবেন না।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "উচ্চে পৌঁছান, কারণ তারা আপনার মধ্যে লুকিয়ে আছে। গভীর স্বপ্ন দেখ, প্রতিটি স্বপ্ন লক্ষ্যের আগে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "আপনি যদি সমস্ত ত্রুটির দরজা বন্ধ করে দেন তবে সত্য বন্ধ হয়ে যাবে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • বাংলায় উচ্চ অঙ্গের শিক্ষাগ্রন্থ বাহির হইতেছে না এটা যদি আক্ষেপের বিষয় হয় তবে তার প্রতিকারের একমাত্র উপায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় উচ্চঅঙ্গের শিক্ষা প্রচলন করা।
  • মানুষের একটা বয়স আছে যখন সে চিন্তা না করিয়াও বিবাহ করিতে পারে। সে বয়স পেরোলে বিবাহ করিতে দুঃসাহসিকতার দরকার হয়।
  • নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
    ‘ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।’
    নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,
    কহে, ‘যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।’
  • প্রেমের দ্বারা চেতনা যে পূর্ণশক্তি লাভ করে সেই পূর্ণতার দ্বারাই সে সীমার মধ্যে অসীমকে, রূপের মধ্যে অপরূপকে দেখতে পায়— তাকে নূতন কোথাও যেতে হয় না।
    • শান্তিনিকেতন ৮, ২৯
  • আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব।
    আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাব
    ভরাব না ভূষণভারে, সাজাব না ফুলের হারে-
    প্রেমকে আমার মালা করে গলায় তোমার দোলাব।
  • মনুষ্যত্বের মূলে আর একটি প্রকাণ্ড দ্বন্দ্ব আছে ; তাকে বলা যেতে পারে প্রকৃতি এবং আত্মার দ্বন্দ্ব। স্বার্থের দিক এবং পরমার্থের দিক, বন্ধনের দিক এবং মুক্তির দিক, সীমার দিক এবং অনন্তের দিক– এই দুইকে মিলিয়ে চলতে হবে মানুষকে।
  • মানুষের বিশ্বজয়ের এই একটা পালা বস্তুজগতে; ভাবের জগতে তার আছে আর-একটা পালা। ব্যাবহারিক বিজ্ঞানে একদিকে তার জয়স্তম্ভ, আর-একদিকে শিল্পে সাহিত্যে।
    • সাহিত্যের তাৎপর্য
  • প্রেম যাহা দান করে, সেই দান যতই কঠিন হয়, ততই তাহার সার্থকতার আনন্দ নিবিড় হয়।
    • মনুষ্যত্ব
  • স্বার্থ আমাদের যে-সব প্রয়াসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তার মূল প্রেরণা দেখি জীবপ্রকৃতিতে; যা আমাদের ত্যাগের দিকে, তপস্যার দিকে নিয়ে যায় তাকেই বলি মনুষ্যত্ব, মানুষের ধর্ম।
  • আপনাকে বৃহতে উপলব্ধি করাই সত্য, অহংসীমায় অবরূদ্ধ জানাই অসত্য। ব্যক্তিগত দুঃখ এই অসত্যে-।
    • মানুষের ধর্ম-২
  • মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
    মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
    এই সূর্য্য করে এই পুষ্পিত কাননে
    জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই!
  • যাহাকে তুমি ভালোবাস তাহাকে ফুল দাও, কাঁটা দিও না ; তোমার হৃদয়-সরোবরের পদ্ম দাও, পঙ্ক দিও না। হাসির হীরা দাও, অশ্রুর মুক্তা দাও; হাসির বিদ্যুৎ দিও না, অশ্রুর বাদল দিও না।
  • "মেঘ আমার জীবনে ভেসে আসে, আর বৃষ্টি বা ঝড় বয়ে আনতে নয়, আমার সূর্যাস্তের আকাশে রঙ *যোগ করতে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.

"ভালোবাসা একটি অন্তহীন রহস্য, কারণ এর ব্যাখ্যা করার আর কিছুই নেই।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.

  • "যারা অনেক কিছুর মালিক তাদের ভয় পাওয়ার অনেক কিছু আছে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "জলের মাছ নীরব, পৃথিবীর প্রাণীরা কোলাহল করছে, বাতাসে পাখি গান করছে। কিন্তু মানুষ তার মধ্যে আছে সমুদ্রের নীরবতা, পৃথিবীর কোলাহল এবং বাতাসের সঙ্গীত।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "সবকিছুই আমাদের কাছে আসে যা আমাদেরই যদি আমরা তা গ্রহণ করার ক্ষমতা তৈরি করি।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "তার পাপড়ি ছিঁড়ে, আপনি ফুলের সৌন্দর্য সংগ্রহ করবেন না।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি না, বরং তাদের মোকাবেলায় নির্ভীক হতে চাই। আমার বেদনাকে স্তব্ধ করার জন্য আমি ভিক্ষা করি না, কিন্তু হৃদয়কে জয় করতে চাই।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "বন্ধুত্বের গভীরতা পরিচয়ের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে না।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "সর্বোচ্চ শিক্ষা হল সেই শিক্ষা যা আমাদের কেবল তথ্যই দেয় না বরং আমাদের জীবনকে সমস্ত অস্তিত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "ছোট জ্ঞান হল একটি গ্লাসের জলের মতো: স্বচ্ছ, স্বচ্ছ, বিশুদ্ধ। মহান জ্ঞান হল সমুদ্রের জলের মতো: অন্ধকার, রহস্যময়, দুর্ভেদ্য।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "মন, তীক্ষ্ণ কিন্তু প্রশস্ত নয়, প্রতিটি বিন্দুতে লেগে থাকে কিন্তু সরে না।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • "বয়স বিবেচনা করে; যুব উদ্যোগ।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.
  • প্রেমের ধর্ম এই, সে ছোটোকেও বড়ো করিয়া লয়। আর, আড়ম্বর-প্রিয়তা বড়োকেও ছোটো করিয়া দেখে। এই নিমিত্ত প্রেমের হাতে কাজের আর অন্ত নাই, কিন্তু আড়ম্বরের হাতে কাজ থাকে না। প্রেম শিশুকেও অগ্রাহ্য করে না, বার্ধক্যকে উপেক্ষা করে না, আয়তন মাপিয়া সমাদরের মাত্রা স্থির করে না।
    • হাতে কলমে -১
  • রমণীর প্রেমের মধ্যে পরিতৃপ্তি আছে, বিশ্বাস আছে, নিষ্ঠা আছে, কিন্তু পুরুষের প্রেমের মধ্যে যে একটি চির অতৃপ্তিপূর্ণ অনির্বচনীয় সুখ আছে তাহা বোধ করি খুব অল্প রমণী উপভোগ করিয়াছে।
  • স্ত্রী-পুরুষগত প্রেমের ন্যায় প্রবল শক্তি আর কিছু আছে কি না সন্দেহ। এই শক্তি ষোলো আনা মাত্রায় সমাজের কাজে লাগাইলে মানবসভ্যতা অনেকটা বল পায়। এই শক্তি হইতে বঞ্চিত করিলে সমাজের একটি প্রধান বল অপহরণ করা হয়।
    • সমাজে স্ত্রী-পুরুষের প্রেমের প্রভাব।
  • ভালোবাসা অর্থে আত্মসমর্পণ নহে। ভালোবাসা অর্থে, নিজের যাহা কিছু ভালো তাহাই সমর্পণ করা। হৃদয়ে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা নহে; হৃদয়ের যেখানে দেবত্রভূমি, যেখানে মন্দির, সেইখানে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা।
  • মানুষের দেবতা মানুষের মনের মানুষ, জ্ঞানে কর্মে ভাবে যে পরিমাণে সত্য হই সেই পরিমাণেই সেই মনের মানুষকে পাই –অন্তরে বিকার ঘটলে সেই আমার আপন মনের মানুষকে মনের মধ্যে দেখতে পাই নে। মানুষের যত-কিছু দুর্গতি আছে সেই আপন মনের মানুষকে হারিয়ে, তাকে বাইরের উপকরণে খুঁজতে গিয়ে, অর্থাৎ আপনাকেই পর করে দিয়েছে।
    • মানুষের ধর্ম ১/১১
  • মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর-একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে। মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপমান মনে করি।
  • যে পাখির ডানা সুন্দর ও কণ্ঠস্বর মধুর তাকে খাঁচায় বন্দী করে মানুষ গর্ব অনুভব করে; তার সৌন্দর্য সমস্ত অরণ্যভূমির, এ কথা সম্পত্তিলোলুপরা ভুলে যায়। মেয়েদের হৃদয়মাধুর্য ও সেবানৈপুণ্যকে পুরুষ সুদীর্ঘকাল আপন ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে কড়া পাহারায় বেড়া দিয়ে রেখেছে। মেয়েদের নিজের স্বভাবেই বাঁধনমানা প্রবণতা আছে, সেইজন্যে এটা সর্বত্রই এত সহজ হয়েছে।
  • শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী,
    পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
    আপন অন্তর হতে। বসি কবিগণ
    সোনার উপমাসূত্রে বুনিছে বসন।
    সঁপিয়া তোমার ’পরে নূতন মহিমা
    অমর করিছে শিল্পী তোমার প্রতিমা।
  • প্রেম শান্তিরূপেও আসবে অশান্তিরূপেও আসবে, সুখ হয়েও আসবে দুঃখ হয়েও আসবে–সে যে-কোনো বেশেই আসুক তার মুখের দিকে চেয়ে যেন বলতে পারি তোমাকে চিনেছি, বন্ধু তোমাকে চিনেছি।
  • সহজ মানুষের সত্যটি সামাজিক মানুষের কুয়াশায় ঢেকে রেখে দেয়। অর্থাৎ আমরা নানা অবান্তর তথ্যের অস্বচ্ছতার মধ্যে বাস করি। শিশুর জীবনের যে সত্য তার সঙ্গে অবান্তরের মিশেল নেই। তাই, তার দিকে যখন চেয়ে দেখবার অবকাশ পাই তখন প্রাণলীলার প্রত্যক্ষ স্বরূপটি দেখি; তাতে সংস্কারভারে পীড়িত চিন্তাক্লিষ্ট মন গভীর তৃপ্তি পায়।
  • সুন্দর আপনি সুন্দর এবং অন্যকে সুন্দর করে। কারণ, সৌন্দর্য্য হৃদয়ে প্রেম জাগ্রত করিয়া দেয় এবং প্রেমই মানুষকে সুন্দর করিয়া তোলে।
    • সৌন্দর্য্য ও প্রেম
  • কবিদিগকে আর কিছুই করিতে হইবে না, তাঁহারা কেবল সৌন্দর্য্য ফুটাইতে থাকুন —জগতের সর্ব্ত্র যে সৌন্দর্য্য আছে তাহা তাঁহাদের হৃদয়ের আলোকে পরিস্ফুট ও উজ্জ্বল হইয়া আমাদের চোখে পড়িতে থাকুক, তবেই আমাদের প্রেম জাগিয়া উঠিবে, প্রেম বিশ্বব্যাপী হইয়া পড়িবে।
    • কবিতা ও তত্ত্ব
  • জ্ঞানে প্রেমে অনেক প্রভেদ। জ্ঞানে আমাদের ক্ষমতা বাড়ে, প্রেমে আমাদের অধিকার বাড়ে। জ্ঞান শরীরের মত, প্রেম মনের মত। জ্ঞান কুস্তি করিয়া জয়ী হয়, প্রেম সৌন্দর্য্যের দ্বারা জয়ী হয়। জ্ঞানের দ্বারা জানা যায় মাত্র, প্রেমের দ্বারা পাওয়া যায়। জ্ঞানেতেই বৃদ্ধ করিয়া দেয়, প্রেমেতেই যৌবন জিয়াইয়া রাখে। জ্ঞানের অধিকার যাহার উপরে তাহা চঞ্চল, প্রেমের অধিকার যাহার উপরে তাহা ধ্রুব। জ্ঞানীর সুখ আত্মগৌরব-নামক ক্ষমতার সুখ, প্রেমিকের সুখ আত্মবিসর্জ্জন-নামক স্বাধীনতার সুখ।
    • জ্ঞান ও প্রেম
  • পৃথিবীর চারি দিকে দেয়াল, সৌন্দর্য্য তাহার বাতায়ন। পৃথিবীর আর সকলই তাহাদের নিজ নিজ দেহ লইয়া আমাদের চোখের সম্মুখে আড়াল করিয়া দাঁড়ায়, সৌন্দর্য্য তাহা করে না —সৌন্দর্য্যের ভিতর দিয়া আমরা অনন্ত রঙ্গভূমি দেখিতে পাই।
    • মর্ত্যের বাতায়ন
  • ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই, তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে, নতুবা সে ছেলেই থাকিবে, মানুষ হইবে না। শিশুকাল হইতেই কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়া সঙ্গে সঙ্গে যথা পরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনার অবসর দিতে হইবে।
  • তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে,
    তা ব’লে ভাবনা করা চলবে না।
    ও তোর আশালতা পড়বে ছিঁড়ে,
    হয়তো রে ফল ফলবে না॥
    আসবে পথে আঁধার নেমে, তাই ব’লেই কি রইবি থেমে—
    ও তুই বারে বারে জ্বালবি বাতি,
    হয়তো বাতি জ্বলবে না॥
  • পৃথিবীতে সকলের চেয়ে বড়ো জিনিস আমরা যাহা কিছু পাই তাহা বিনামূল্যেই পাইয়া থাকি, তাহার জন্য দরদস্তুর করিতে হয় না। মূল্য চুকাইতে হয় না বলিয়াই জিনিসটা যে কত বড়ো তাহা আমরা সম্পূর্ণ বুঝিতেই পারি না।
    • পরিচয়/ ভগিনী নিবেদিতা
  • "যে করে ধর্মের নামে বিদ্বেষ সঞ্চিত, ঈশ্বরকে অর্ঘ্য হতে সে করে বঞ্চিত।"
    • স্ফুলিঙ্গ -২০৭
  • সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
    রেখেছ বাঙালি ক’রে, মানুষ কর নি।
  • যাহাদের স্বাভাবিক ভদ্রতা নাই তাহারা ভদ্র হইতে ইচ্ছা করিলে আনুষ্ঠানিক ভদ্রতার কিছু বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে।
  • অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই।
    • হৈমন্তী, গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৫০
  • এক দলকে বিশেষ পরিচয়কালে বলি বটে হিন্দুস্থানি, কিন্তু তাদের হিন্দুস্থান বাংলার বাইরে।
  • ধর্ম আমাদের মেলাতে পারে নি, বরঞ্চ হাজারখানা বেড়া গড়ে তুলে সেই বাধাগুলোকে ইতিহাসের অতীত শাশ্বত বলে পাকা করে দিয়েছে। ইংরেজ নিজের জাতকে ইংরেজ বলেই পরিচয় দেয়। যদি বলত খৃস্টান তা হলে যে ইংরেজ বৌদ্ধ বা মুসলমান বা নাস্তিক তাকে নিয়ে রাষ্ট্রগঠনে মাথা ঠোকাঠুকি বেধে যেত।
  • ক্ষণিকের অতিথি স্বর্গ হইতে মর্ত্যে আসেন। কাঁদিয়ে দিয়ে চলে যান। এই যাওয়া-আসায় স্বর্গ-মর্ত্যের মিলন-পথ বিরহের ভিতর দিয়ে খুলে যায়।
    • শেষ বর্ষণ
  • অধিকার লাভের যে মর্যাদা আছে, সেই মর্যাদা রক্ষা করিতে হইলে অধিকার প্রয়োগকে সংযত করিতে হয় ।
    • চোখের বালি—৫২ পরিচ্ছেদ
  • অন্যান্য অধিকার হইতে স্ত্রী-অধিকারের প্রভেদ এই যে স্ত্রীকে পাঁচজনের কাছ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া একলা নিজের কাছে রাখিলেই যে সব সময় বেশী করিয়া পাওয়া যায় তাহা নহে।
    • মণিহারা (গল্পগুচ্ছ)
  • জীবের মধ্যে অনন্তকে অনুভব করারই অন্য নাম ভালোবাসা। প্রকৃতির মধ্যে অনুভব করার নাম সৌন্দর্য-সম্ভোগ।
    • মনুষ্য (পঞ্চভূত )
  • বাইরের আলোর উপর ভরসা রাখাই অভ্যাস, তাই অন্ধকার হলেই একেবারে অন্ধকার দেখি।
    • মুক্তধারা
  • মনকে নিজের কাছে রাখিস নে। ভিতরে যে ঠাকুরটি আছেন তাঁরই পায়ের কাছে রেখে আয়, সেখানে অপমান পৌঁছোবে না।
    • মুক্তধারা
  • ‘বোবার শত্রু নেই’ যে পুরুষ বলেছিল সে নিশ্চয় ছিল অবিবাহিত।
    • সংস্কার (গল্পগুচ্ছ)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে উক্তি

সম্পাদনা
  • সারা পৃথিবীর গানের সুরকে আয়ত্ত করে নতুন সুর সৃষ্টি করলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সুরের আলপনাকে বাংলা গানে ছিটিয়ে দিলেন। হয়ে গেল এক অপূর্ব সৃষ্টি। সর্বযুগের, সর্বকালের সৃষ্টি। এতবড়ো সুরকার আজও জন্মায়নি কোন দেশে। এই বুড়ো পৃথিবীকে ইচ্ছে হয় জিজ্ঞাসা করি, বয়েস তো অনেক হল। রবীন্দ্রনাথের মতো এমন সর্বতোমুখী প্রতিভা আর দেখেছে একটা।
    • হেমন্ত মুখোপাধ্যায় - আনন্দধারা, সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা; পৃষ্ঠা:৩৪ (২০১৯) আইএসবিএন 978-93-8270-654-0
  • ব্রিটিশরা তাঁকে(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে) উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসেবে বিবেচনা করে, যদিও তাঁর জাতীয়তাবাদ ছিল পুরোটাই সাংস্কৃতিক। তাছাড়া উচ্চ প্রশাসনিক পদে অধিক সংখ্যক ভারতীয়কে সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দাবী বিষয়ক কোনো ভূমিকাই তিনি রাখেননি। রবীন্দ্রের কাছে এসবই ছিল ব্রিটিশ শাসনের মতোই অচেনা, অজানা। তাঁর রাজনীতির ধারণা ছিল বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রসার। স্বভাববশতই, তিনি যখন একজন খ্যাতিমান অতিথি হিসেবে নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, সেখানকার 'অতিথি বই'তে তিনি(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) নিজের জাতীয়তা হিসেবে “ভারতীয়” পরিচয় না লিখে, লেখেন “বাঙালী”।
    • অধ্যাপক হিউ টিঙ্কার। Death of Rabindranath Tagore (1982)[১]
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতা নিজে ইংরেজিতে অনুবাদ করে “গীতাঞ্জলি” বই বের করেছিলেন। বইটি জমা দিয়ে তিনি ১৯১৩ সালে পান নোবেল পুরস্কার। তাঁর পরে বাংলা সাহিত্যের আর কেউ এ ধরনের বড় কাজ করতে পারেননি।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
 
উইকিসংকলন
উইকিসংকলনে এই লেখক রচিত অথবা লেখক সম্পর্কিত রচনা রয়েছে: